মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে হানাদার বাহিনীর টর্চারসেল হিসেবে ব্যবহৃত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত টিনশেড ঘরটিকে ‘গল্লামারী বধ্যভূমি স্মৃতি জাদুঘর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে সংরক্ষণ ও এর পারিপার্শ্বিক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে খুলনার বিশিষ্ট বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সাথে এক মতবিনিময় সভা রবিবার(২৯ মে)বেলা সাড়ে ১১টায় উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন এর সভাপতিত্বে তাঁর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময়কালে উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত থেকে মতামত প্রদান করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের মুজিব বাহিনীর প্রধান ও বাগেরহাট জেলা পরিষদ প্রশাসক বীরমুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু, খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক বীরমুক্তিযোদ্ধা শেখ হারুনুর রশীদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুলনা জেলা ইউনিটের কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা সরদার মাহবুবার রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুলনা মহানগর ইউনিটের কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আলমগীর কবীর।
এসময় উপাচার্য বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধীনতার স্বপক্ষের নিরীহ শত শত মানুষকে হত্যা করে লাশ গল্লামারী ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ফেলতো। এখানে বিশেষ করে তৎকালীন খুলনা রেডিও সেন্টার কার্যকর ছিলো এবং সেটি হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত হতো। রেডিও সেন্টারটির পাশেই অবস্থিত একটি টিনশেড ঘরে পাক সেনারা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষদের ধরে এনে নৃশংসভাবে নির্যাতনের পর হত্যা করতো। স্মৃতিবাহী সেই টর্চারসেল টিনশেড ঘরটি এখনও ক্যাম্পাসে বিদ্যমান রয়েছে। তবে তা সংস্কারের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখনই এটা সংস্কার না করা হলে ভবিষ্যতে স্মৃতিচিহ্নটুকু থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নির্দশন হিসেবে রাখার উদ্দেশ্যে এই টর্চারসেলটিকে ‘গল্লামারী বধ্যভূমি স্মৃতি জাদুঘর, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন, ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. মো. আবু তাহেরসহ বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সদস্যবৃন্দ স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। তারা এ বিষয়ের স্বপক্ষে মত দিয়েছেন। এই টিনশেড ঘরটি সংস্কার ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়নে ইউজিসি থেকে প্রাথমিকভাবে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে বলে তিনি অবহিত করেন। কাজটি যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে উপাচার্য বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
এর আগে বীরমুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ ক্যাম্পাসে পৌঁছালে উপাচার্য নিজ অফিস থেকে নেমে তাঁদেরকে স্বাগত জানান। এছাড়া আলোচনার প্রাক্কালে তাঁদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এসময়ে উপস্থিত বীরমুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এটি অনেক আগেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চিন্তায় নেওয়ার দরকার ছিলো। কেননা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বধ্যভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিলম্বে হলেও বর্তমান উপাচার্য এই স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেজন্য তাঁরা বীরমুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
আলোচনাকালে বীরমুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে ১৩ এপ্রিল ও বিজয় লাভের প্রাক্কালে ১৫-১৬ ডিসেম্বরে এই স্থানে যুদ্ধের স্মৃতি স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তারা এখানে শহিদ হাবিব ও আনছারসহ অন্যান্য বীরমুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণ করেন।
সভা শেষে বীরমুক্তিযোদ্ধাবৃন্দকে নিয়ে উপাচার্য একাত্তরের টর্চারসেল হিসেবে খ্যাত টিনশেড ঘরটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেন এবং এর সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়টি তুলে ধরেন।
এসময় রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, সংস্কার ও উন্নয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থপতি প্রফেসর ড. খোঃ মাহফুজ উদ দারাইন, সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি এস এম নাজিম উদ্দিন, প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আব্দুর রাজ্জাক জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আতিয়ার রহমান, এস্টেট শাখার উপ-রেজিস্ট্রার কৃষ্ণপদ দাশসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।