পারিবারিক বিরোধের জের ধরে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার খলিসা গ্রামের বড় ভাই শাহিনুরসহ পরিবারের ৪ সদস্যকে চাপাতি দিয়ে একাই কুপিয়ে হত্যা করেছে ছোট ভাই রায়হানুল। বুধবার বিকেলে সাতক্ষীরা সিআইডি অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য দেন সিআইডির খুলনা বিভাগীয় অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক। তবে কাউকে জানানোর ভয় না থাকায় শিশু মারিয়াকে হত্যা করা হয়নি বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, রায়হানুল বেকার ছিল। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় খাওয়ার খোটা দিয়ে তাকে ব্যাপক গালমন্দ করে ভাবী সাবিনা খাতুন। তখনই সে ভাবীকে হত্যার পরিকল্পনা আটে। রাতে টিভি দেখার সময় বিদ্যুৎ বিল বেশি হবে বলে তাকে বকা দেয় বড় ভাই শাহিনুর। এ সময় সে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকেও হত্যার পরিকল্পনা করে। পরে সে কোমল পানীয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ভাই ও ভাবীকে খাওয়ায়। রাতে দরজা না লাগিয়ে বাইরের কলাপসিবল গেট লাগিয়ে শাহিনুরসহ পরিবারের সবাই ঘুমাতে যায়। রাতের শেষ ভাগে সে গাছ বেয়ে চিলে কোটা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে প্রথমে ঘুমন্ত ভাই ও ভাবীকে চাপাতি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। ছেলে সিয়াম ও মেয়ে তাসনিম জেগে গেলে তাদেরকেও হত্যা করে রায়হানুল। পরে সে চাপাতি পুকুরে ফেলে গোসল করে ঘুমাতে যায়।
রায়হানুলকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত ডিআইজি। সংবাদ সম্মেলনে সাতক্ষীরা সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে রায়হানুল ইসলামের দেয়া তথ্য মতে বুধবার সিআইডি কর্মকর্তারা নিহতদের বাড়ির পাশ্ববর্তী পুকুর থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতিটি উদ্ধার করেছে। বিকালে গ্রেপ্তারকৃত রায়হানুল আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম।
এদিকে এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল মালেকের ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারি সিআইডি কর্মকর্তা। এর আগে মঙ্গলবার হত্যা মামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে খলিসা গ্রামের নিহত শাহিনুরের প্রতিবেশী আব্দুস সালামের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক, একই গ্রামের কাশেম ঢালীর ছেলে পুলিশের কথিত সোর্স আব্দুল মালেক ও ধানরঘোরা গ্রামের সামছুদ্দিনের ছেলে আসাদুল ইসলাম গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
উল্লেখ্য, গত ১৫ অক্টোবর ভোর রাতে কোন এক সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামের মৃত. শাহাজান আলীর ছেলে হ্যাচারি মালিক শাহিনুর রহমানের ঘরে ঢুকে শাহীনুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০), ৯ বছরের শিশু ছেলে সিয়াম হোসেন মাহী ও ৬ বছরের শিশু কন্যা তাসমিন সুলতানাকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করা হয়। রাতে নিহত শাহিনুরের শ্বাশুড়ি ময়না খাতুন বাদি হয়ে কলারোয়া থানায় অজ্ঞাতদের আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডি পুলিশকে। এ ঘটনার নিহতের ছোট ভাই রায়হানুলকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। বুধবার হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করেছে রায়হানুল ইসলাম।
খুলনা গেজেট/এনএম