বর্ষা ও শরৎ মৌসুমে কাঙ্খিত বৃষ্টি হয়নি। ফলে আমন আবাদ একদফা হোঁচট খেয়েছে। জেলার আমন উৎপাদন দেড়মাস পিছিয়েছে। অনাবৃষ্টির কারণে আমন ও শীতকালীন শাক-সবজি উৎপাদনে ভাটা ও পাট পঁচানো যাচ্ছে না। করোনার চেয়ে খরায় বড় ধাক্কা খাচ্ছে খুলনার ৮০ হাজার আমন চাষি। আমনের উৎপাদন বাড়বে। কৃষক ঋণী হয়ে পড়েছে।
আম্ফান, ইয়াস ও করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি খুলনার কৃষক। গেল মে মাসে বোরোর ন্যায্যমূল্য পায়নি। অমাবস্যার জোয়ারের ধাক্কায় কয়রার বেদকাশীতে কৃষি অর্থনীতিতে বড় ক্ষতি হয়েছে। জুন মাস থেকে অনাবৃষ্টির কারণে আমন, পাট ও শীতকালীন শাক-সবজি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বর্ষা মৌসূমে ৯৩ হাজার একশ’ ৭০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলেও শরতের এ পর্যন্ত মাত্র ১৬ হাজার পাঁচশ’ ৫৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় আবাদ দেড়মাস পিছিয়েছে। জেলায় তিন হাজার ছয়শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে আউশ, এক হাজার তিনশ’ ১৬ হেক্টর জমিতে পাট, ৩৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো, দুইশ’ ৭৩ হেক্টর জমিতে তরমুজ, দুইশ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে সীম, আট হাজার দুইশ’ ৬৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ হয়েছে। অধিকাংশ ফসলে সেচ দিতে হচ্ছে।
এই সূত্র বলেছে, ২০২১ সালের জুন মাসে ৩৮৮ দশমিক ৮৯ মি.মি., জুলাই মাসে ৫০৬ মি.মি. ও আগস্ট মাসে ২১৩ মি.মি বৃষ্টিপাত হয়। এ বছরের জুন মাসে ৯৪ দশমিক ৩৬ মিলিমিটার, জুলাই মাসে ৯১ দশমিক ২৭ মি.মি এবং ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ১৬১ দশমিক ১৯ মি.মি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক মো: হাফিজুর রহমান আমন চাষ প্রসঙ্গে এ প্রতিবেদককে বলেন, ফুলতলা, তেরখাদা, রূপসা, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, দিঘলিয়া ও দাকোপ উপজেলায় নদী থেকে পানি উত্তোলন করে আমন আবাদ করা হচ্ছে। পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার নদীর পানি এখনো নোনা থাকায় এ দুই উপজেলায় নদীর পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যেই বীজতলা একশ’ শতাংশ সম্পন্ন হলেও আমন উৎপাদন কম হবে।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, কাঙ্খিত বৃষ্টি না হওয়ায় আমন রোপনের অগ্রগতি কম। রোপনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪০ শতাংশ আমন আবাদ হয়েছে। সাড়ে চারশ’ একর জমির উৎপাদিত পাট নদীর জোয়ারের পানিতে, আবার অন্য কোথাও গর্ত করে পলিথিন বিছিয়ে মাটি চাপা দিয়ে পঁচানো হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহায়তায় সেচ দেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
দাকোপ উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান তথ্য দিয়েছেন, অনাবৃষ্টির কারণে আমনের বীজতলা তৈরিতে দেরি হয়েছে। আমন আবাদ দেড়মাস পিছিয়ে গেছে। তার কর্মস্থল পানখালী ইউনিয়নে তরমুজ ও সবজির উৎপাদন কমে গেছে। গত রোববার ছিটেফোটা বৃষ্টি হয়েছে পানখালীতে। তাতে ভূমিতে জোঁ আসেনি।
ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া গ্রামের চাষি আবু হানিফ মোড়ল জানান, কলসে করে বয়ে এনে পানি দিয়ে সীমের আবাদ বাঁচাতে হচ্ছে। তিনি ঘেরের আইলের পাশে দশ বিঘা জমিতে সীমের আবাদ করেছেন। পানির অভাবে খর্ণিয়া ইউনিয়নের অর্ধেকের বেশি জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। ভদ্রা নদীর পানি দিয়ে টিপনা, বামনদিয়া, পাঁচপোতা পাথুরিয়া, গোনালী, খর্ণিয়া ও ভদ্রদিয়া গ্রামের চাষিরা আমনের আবাদ করছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়বে।
খুলনা গেজেট/ টি আই