বাগেরহাটে খননের ফলে প্রাণ ফিরেছে ৩৩ টি খাল ও ২টি নদীর। ফলে প্রকৃতি ফিরে পেয়েছে তার আপন রূপ। অবৈধ স্থাপনা ও পলি এসে অনেকদিন ধরে বন্ধ থাকার পর খননকৃত নদী ও খালগুলোতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ শুরু হয়েছে। এতে প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী ও খালগুলোর দুই পাশ সবুজে ছেয়ে গেছে। নিয়মিত নৌকা চলাচল করছে খালে। বৃষ্টির পানি দ্রুত নিস্কাশন হচ্ছে। জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি পেয়েছেন বাগেরহাটের পাঁচ উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষ। বেড়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার সবজি, বিভিন্ন ফসল ও মাছের উৎপাদন। নৌ পথে যাতায়াত ও পন্য পরিবহনের ফলে খরচ ও হয়রানি কমেছে কৃষকের। খাল খননের ফলে খুশি এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাট কর্তৃক জেলার ফকিরহাট, কচুয়া, মোল্লাহাট, বাগেরহাট সদর ও চিতলমারী উপজেলায় বর্তমানে ৩৩টি খাল ও দুটি নদীর প্রায় একশ কিলোমিটার খনন করার ফলে স্থানীয়রা এসব সুবিধা পাচ্ছেন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, ১৯৮০ সালের দিকে বাগেরহাটের বিভিন্ন নদী ও খাল খনন করা হয়েছিল। তখন এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়েত ও পন্য পরিবহনের প্রধান বাহন ছিল নৌকা, ট্রলার ও লঞ্চ। কিন্তু কালের প্রবাহে এই প্রবাহমান নদী খালের মধ্যে বাঁধ দিয়ে মাছ আহরণ, খাল আটকিয়ে মাছ চাষ, নদী ও খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা তৈরি, নদী-খালের উপর সেতু তৈরির জন্য পানি চলাচল বন্ধ রাখাসহ মনুষ্য সৃষ্ট নানা কারণে জেলার বেশিরভাগ নদী খাল ভরাট হয়ে যায়। যার ফলে ওইসব এলাকায় জলাবদ্ধতা, পানি নিস্কাশন না হওয়াসহ জীবন যাপনে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। স্বাভাবিক জীবন যাপন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে উপকূলীয় এই অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে নদী খালগুলোকে অবৈধ দখলমূক্ত ও খননের দাবি জানিয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রীও খাল খননের ঘোষনা দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রতিতে বাগেরহাট পানি উন্নয়ণ বোর্ডের ৩৬/১ পোল্ডারে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের অধীনে জেলার ৫টি উপজেলায় ৫৫টি খাল ও ৫টি নদী খনন শুরু হয়। যার মধ্যে ৩৩টি খাল ও দুটি নদীর ক্ষনন সম্পূর্ণ হয়েছে।
শুধু খননই নয়, খনন শেষে নদী ও খালের দুই পাশে বনায়নের জন্য চারা রোপন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই খননের ফলে এবার বৃষ্টি মৌসুমে কোন জলাবদ্ধতা হয়নি । স্বস্তি ফিরেছে চিংড়ি, সবজি ও ধান চাষীদের মনে। কমেছে পরিবহন খরচ, মাঠ ও ক্ষেত থেকে নৌকা যোগে মাছ, সবজিসহ পন্য সরবরাহ করতে পেরে খুশি চাষী,এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা।
ফকিরহাট উপজেলার ভৈরব নদীর তীরের বাসিন্দা সীমা মজুমদার, মোক্তার শেখ, লাভলু, ও বাসন্তীসহ কয়েকজন বলেন, ভৈরব নদী কাটার আগে প্রতি বছর অতিবৃষ্টিতে আমাদের বাড়ি ও ক্ষেত খামারে পানি জমে থাকতো। এবার আর কোন পানি জমেনি, সব পানি এখন খালে নেমে যায়। আমরা এখন অনেক শান্তিতে আছি । আমাদের ভিটায় এখন অনেক সবজি হয়। আমরা মনেকরি নদী ও খালে যেমন প্রান ফিরেছে,তেমনি আমরা নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি’।
মোল্লাহাট উপজেলার চীত্রানদীর পাড়েরর বাসিন্দা কৃষক নন্দবালা, দেবদাস রায়সহ অনেকে বলেন, আমরা এখন নৌকায় করে ধান, মাছ,সবজি পরিবহন করতে পারছি। এতে আমাদের অনেক খরচ কম হচ্ছে। আগে জল আটকে থাকতো এখন খাল থেকে বের হয়ে যায়। আমাদের দীর্ঘদিনের আশা পুরন হয়েছে। এতে আমরা খুব খুশি হয়েছি।
ফকিরহাট উপজেলার মুলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ্যাড. হিটলার গোলদার বলেন, আমাদের উপজেলার বিভিন্ন নদী খাল ভরাট হওয়ার ফলে স্থানীয়দের অসহনীয় দূর্ভোগ পোহাতে হত। এবার ভৈরব ও চিত্রাসহ বিভিন্ন নদী খাল খননের ফলে সময় মত কৃষকরা পানি পাচ্ছে এখন ফসল ভাল হচ্ছে। এবার কোন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি, অতিবর্ষনে নদী ও খালে পানি বের হওয়ায় ক্ষতি হয়নি চিংড়ি ঘেরের। আরও যেসব খাল ভরাট হয়ে আছে সেগুলো দ্রুত খননের দাবী জানান তিনি।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ রাকিব হোসেন বলেন, অনেক বাধা বিপত্তির মুখেও প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সদইচ্ছা ও আন্তরিক সহযোগিতায় আমরা খাল খনন কাজ সম্পূর্ণ করেছি। খাল খননের সময় অনেক অবৈধ স্থাপনা আমাদের উচ্ছেদ করতে হয়েছে। এসব কাজে স্থানীয় প্রশাসন আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে অন্যান্য খালের কাজও আমরা চলমান রেখেছি। খালের দুই পাশে বনায়ন করার জন্য বিভিন্ন গাছের চারা রোপন করা হয়েছে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাহিদুজ্জামান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ‘বাগেরহাট জেলার ৫টি উপজেলায় ৫৫টি খাল ও ৫টি নদী খনন কাজ শুরু করেছি।ইতোমধ্যে আমাদের ৩৩টি খাল ও দুটি নদী সম্পূর্ণভাবে খনন কাজ শেষ করেছি। বর্ষার মৌসুম শেষ হলে অন্যান্য খাল খনন সম্পূর্ণ করা হবে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট / এমএম