খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ কার্তিক, ১৪৩১ | ২৫ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১১২৯
  সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিন্ধান্ত
  তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে তিন রিভিউ আবেদনের শুনানি ১৭ নভেম্বর

কয়রায় তিন লক্ষাধিক মানুষের জীবিকার সংকট

তরিকুল ইসলাম

প্রাকৃতিক দু‌র্যো‌গে ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও আমন ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে‌ছে। ‌ভে‌সে গে‌ছে চিংড়ির ঘের। শাকসবজি উৎপাদন হয়নি। দফায় দফায় লকডাউনের কারণে কৃষি শ্রমিকরা অন্য জেলায় ধান কাটতে যেতে পারিনি, শহরে কাজ পাইনি দিনমজুররা। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে চাকরী হারিয়ে এলাকায় বেকার বেড়েছে। সুন্দরবনে প্রবেশ নিষেধ। ১০ টাকা কেজি চাল কিনতে পারিনি শত শত পরিবার। ফলে আর্থিক সংকটে পড়েছে কয়রার তিন লাখ মানুষ। জীবন বাঁচাতে অধিকাংশ পরিবার মহাজন ও এনজিও’র চড়া সুদের ফাঁদে পড়েছে।

সরেজমিন জানা যায়, সুন্দরবনের কোলঘেষা উপজেলা খুলনার কয়রা। সাতটি ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের বসবাস। এখানকার ৮৮ শতাংশ মানুষ কৃষি নির্ভর (শুমারী ২০১১)। লবনাক্ত অঞ্চল হওয়ায় সবজি চাষ তেমন ভালো হয় না। এক ফসলি কৃষি জমিতে বর্ষা মৌসুমে আমন চাষ, কোথাও কোথাও আমন ধান ঘরে তোলার পরে তরমুজ চাষ করা হয়। আর বেশির ভাগ মানুষ চিংড়ি চাষের ওপর নির্ভরশীল। বছরের প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস দেশের বিভিন্নস্থানে দিনমজুরের কাজ করেন প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠি।

আইলা-আম্পানে বিধ্বস্ত হয় কয়রার কৃষি অর্থনীতি। এলাকা ছেড়ে দেশের বিভিন্নস্থানে কাজ-কর্ম করে ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে সেই ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছিল ক্ষতিগ্রস্তরা। এমনাবস্থায় মহামারি করোনার থাবায় দেশে দফায় দফায় লকডাউনের ফলে এলাকার বাইরে দীর্ঘদিন কাজে যেতে না পারায় ও চাকরী হারিয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। গ্রামে বেকারের সংখ্যা চরম আকার ধারণ করে‌।

এদিকে, চিংড়ি চাষের উপর নির্ভরশীলরাও নানা সমস্যায় ক্ষতির মুখে পড়ে। পরিবহণ জটিলতায় বেশি দামে পোনা কিনতে হয়। ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। অপরদিকে বিদেশে রপ্তানী বন্ধ হওয়ায় বড় মাছের দাম কমে যায়। সাদা মাছের ক্ষেত্রেও একই সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে কাঁকড়ার দাম ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ কমে যায়। এছাড়া তরমুজ চাষী, হাঁস-মুরগীর খামারী, গবাদীপশুর খামারীসহ অন্যান্য পেশার মানুষও নানাবিধ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলাকার দরিদ্র, নিম্নবিত্তসহ মধ্যবিত্ত শ্রেণির জনগণ চরম আর্থিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়।

এমন দুরাবস্থার মধ্যে এ বছরের ২৬ মে ইয়াসের তান্ডবে নদীর দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে নোনা পানিতে প্লাবিত হয় অর্ধশতাধিক গ্রাম। কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর ১২টি স্থান ভেঙে ভেসে যায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমির মৎস্য খামার। ধসে পড়ে প্রায় ৯০ শতাংশ কাঁচা ঘর। নষ্ট হয় জমির ফসল। আভ্যন্তরিণ যোগাযোগ ব্যবস্থা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলাকাবাসি স্বেচ্ছাশ্রমে ১০টি পয়েন্টের বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতিতে গাতির ঘেরী ও দোঁশহালিয়া দিয়ে আজো জোয়ারভাটা খেলছে। পাঁচ মাস ধরে বৃষ্টি-কাঁদার মধ্যে রাস্তায় ঝুঁপড়ি বেঁধে বসবাস করছে শতাধিক পরিবার।

এছাড়া ২ মাস পরে অতিবৃষ্টিতে পুনরায় মৎস্য ঘের ভেসে যায় ও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। নষ্ট হয় আমনের বীজতলা। পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় আমন রোপনে চরম বেগ পেতে হয় চাষীদের। উৎপাদন খরচ তিনগুনের বেশি বেড়ে যাওয়ায় ও জলাবদ্ধতায় ফসলের ঝুঁকি থাকায় কেউ কেউ এবছর ধান রোপন থেকে বিরত থাকেন। যারা করেছেন তারাও ভালো ফলন নিয়ে চিন্তিত ।

দেয়াড়া পশ্চিমপাড়ার আব্দুল হাই জানান, পাঁচ বিঘা জমিতে ঘের (চিংড়ি চাষ) করেন। ইয়াসে পানিতে ডুবে যায় ঘের। পানি নেমে যাওয়ার পরে পুনরায় প্রসেসিং করে পোনা ছাড়লেও বৃষ্টির পানিতে আরও দুইবার ভেসে যায়।

একই গ্রামের তৈয়েবুর রহমান বলেন,  মহারাজপুর ইউনিয়নের লক্ষীখোলা বিলে ৫ বিঘা জমিতে তারা আমন ধান চাষ করতেন। কিন্তু এবছর জলাবদ্ধতায় আমন লাগাতে পারেননি।

জয়পুর গ্রামের মিলাল হোসেন জানান, তিনি মিষ্টি পানির দেড় বিঘা পুকুরে সাদা মাছ ও গলদা চাষ করেছিলেন। ইয়াসে তার লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়।

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়রার জনগণ আর্থিকভাবে ভালো নেই। আম্পান-ইয়াস-অতিবৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতিসহ মৎস্য ঘেরেরও ক্ষতি হয়েছে। বাড়ি-ঘর ভেঙে যায়। স্লুইজ গেটগুলো নষ্ট থাকায় ইয়াসের পরেও বৃষ্টির পানিতে দু’বার প্লাবিত হয়। তিনি আরও বলেন, যতদিন টেকসই বেড়িবাঁধ না হবে, ততদিন এ অঞ্চালের জনগণের দুর্ভোগ কাটবে বলে আমি মনে করিনা।

খুলনা গেজেট/ টি আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!