কোরবানির পশু পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন খুলনার রূপসা উপজেলার নৈহাটি এলাকার জীবন সংগ্রামী মোঃ শামীম সেখ (৩৫)। ২০১০ সাল থেকে এ ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
শামীম সেখ ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে আর পড়াশোনা করা হয়ে ওঠেনি। ছোটবেলা থেকে ধরতে হয়েছে পরিবারের হাল। এরপর কয়েক বছর কেটেছে এই সেই কাজ করে। কখনো অন্যের জমিতে কাজ করেছেন আবার কখনো গ্রাম থেকে দেশি মুরগি ক্রয় করে শহরে বিক্রি করেছেন। এভাবে ব্যবসা করে শামীম সেখ কিছু টাকা জমা করেন। সেই টাকা দিয়ে শামীম সেখ দুইটি ষাঁড় গরু কেনেন। তারপর স্বামী-স্ত্রী মিলে গরু পালন শুরু করেন। নিজেরাই গরুর খাবার যোগাড় করা, গরু চড়ানো, গোসল করানো অর্থাৎ সব কাজ করতেন।
দুইটি গরু থেকে আজ তাদের ৮টি গরু হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা। তিনি এর মাধ্যমেই সংসারের সব ধরণের খরচ মেটান। তার ছেলে বর্তমানে স্কুলে পড়াশোনা করছে। পরিবারে আর্থিক অনটন বলতে আর কিছু নেই। কুড়ে ঘর থেকে এখন হয়েছে পাকা ঘর। গ্রামের মানুষজনের কাছে শামীম সেখ একটি উদ্যোক্তার নাম। সফল খামারীর নাম। গ্রামের আরও কয়েকজন শামীমের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে ষাঁড় বাছুর কিনে লালন পালন শুরু করেছেন।
শামীম সেখ এর সাফল্যের গল্প বলতে গিয়ে কষ্টের কথাগুলোও তার স্ত্রী নুরজাহান জানান, এক বছর আগে কয়েকটি গরু তিনি বাকি বিক্রি করেছিলেন। প্রতারকরা আজো সেই টাকা পরিশোধ করেনি। তখন পুরো পরিবার ভেঙে পড়ে এবং গরুর জন্য নতুন করে একটি ঘর করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। অনেকেই তাকে গরু পালন থেকে সরে আসতে বলে। কিন্তু তিনি সরে আসেননি। আর তাই আজ তিনি সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে আরোহন করছেন। আর্থিক অভাব অনটন আর আমাদের পরিবারকে স্পর্শ করতে পারে না।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে মোঃ শামীম সেখ বলেন, খামার এর সম্প্রসারণই আমার প্রধান লক্ষ্য। বর্তমানে ৮টি গরু হয়েছে। ১ জন মানুষ আমার এখানে কাজ করে তার জীবিকা নির্বাহ করছে। আমি চাই ভবিষ্যতে ২০টি গরু আর অনেক মানুষের কর্মসংস্থান আমার এখানে হোক।
রূপসা উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার মজুমদার জানান, শামীম সেখ একজন সফল খামারি, তার এলাকায় বেশ কয়েকটি খামার রয়েছে। প্রতিনিয়ত সেসব খামারিদের সাথে তারা যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এ বছর উপজেলায় কোরবানি জন্য চাহিদা রয়েছে প্রায় ২ হাজার পশু আর প্রস্তুুত করা হয়েছে ৫ হাজারের অধিক পশু যা চাহিদা মিটিয়েও উদ্বৃত্ত হিসাবে থাকবে। প্রস্তুুতকৃত কোরবানির পশুর মধ্যে ষাঁড়, বলদ ও গাভি ছাড়াও ৩ হাজার ৬৯৩টি ছাগল রয়েছে। এর মধ্যে ৬৫৫ জন বাণিজ্যিক খামারির খামারে প্রস্তুুত করা হয়েছে ১ হাজার ৩৯৫ টি গরু। বাকি বিভিন্ন ধরনের পশু গুলো পারিবারিকভাবে ২-১০টি পর্যন্ত প্রান্তিক লালন-পালনকারিরা প্রস্তুুত করেছেন। পশু মোটাতাজাকরণে বাণিজ্যিক খামারি ও বাসাবাড়িতে প্রান্তিক লালন-পালনকারিদের সঠিক নিয়মে পশু পালনে স্বাস্থ্য সেবাসহ বিভিন্ন সময়ে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এনএম