গত ২৪ ঘন্টায় খুলনার দু’টি হাসাপাতালে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৯ জনের মধ্যে ৭ জনই নারী। খবরটি চমকে ওঠার মতো হলেও এটা শুধু খুলনায় নয়, দেশেও করোনায় নারীর মৃত্যুর হার ক্রমাগত বাড়ছে। যা উঠে এসেছে বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে।
ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন ব্যাপক গতিতে ছড়িয়ে পড়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পাশাপাশি নারীদের মধ্যে টিকা না নেয়ার প্রবণতাও এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে দেশে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যে ২২ হাজার ১৫০ জন মারা গেছে তার মধ্যে ১৪ হাজার ৮২২ জন পুরুষ ও ৭ হাজার ৩২৮ জন নারী। অর্থাৎ মোট মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৬ দশমিক ৯২ শতাংশ পুরুষ ও ৩৩ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী।
যদিও চলতি বছরের পহেলা মার্চ পর্যন্ত দেশে পুরুষের মৃত্যুর হার ছিলো ৭৫ দশমিক ৬১ ও নারীদের ২৪ দশমিক ৩৯। মূলত এর পর থেকেই মৃতদের তালিকায় পুরুষের সংখ্যা বেশি থাকলেও নারীদের সাথে ব্যবধান কমে আসার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কাওসার আফসানা বলছেন নারীদের মৃত্যুর সংখ্যা আগের তুলনায় কিছুটা বেড়ে যাওয়ার মূলে ব্যাপক গতিতে ছড়িয়ে পড়া ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।
“তবে টিকাদানের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের অনুপাত সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া গেলে হয়তো দেখা যাবে বয়ষ্ক নারীদের মধ্যে টিকা দেয়ার প্রবণতা এখনো কম। আবার বাড়ীতে কেউ অসুস্থ হলে নারীরাই তাদের যত্ন এবং দেখা-শোনার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এসব কারণে তারা এমনিতেই ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন,” বলছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, “পারিবারিক ও সামাজিক কিছু সংস্কৃতিও নারীদের জন্য ঝুঁকির পরিবেশ তৈরি করছে। যেমন ধরুন বাইরে থেকে বাজার করে আনলে এখনো বহু পরিবারে গৃহকর্ত্রীই সেগুলো আগে দেখে থাকেন। আবার বাইরে থেকেও অনেকে বয়স্কদের দেখতে আসে। এই করোনার সময় বিশেষ করে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আসার পর এসব বিষয়গুলো নারীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে।”
স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যে গত এপ্রিল থেকে পর্যায়ক্রমে মৃত্যুর ক্ষেত্রে নারী পুরুষের ব্যবধান কমছে অর্থাৎ নারীদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
পহেলা এপ্রিল পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে পুরুষ ছিলো ৭৫ দশমিক ২০ শতাংশ ও নারী ছিলো ২৪ দশমিক ৮০ শতাংশ।
পহেলা মে পর্যন্ত পুরুষের মৃত্যুর হার ৭২ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও নারীর ২৭ দশমিক ১১ শতাংশ এবং পহেলা জুন পর্যন্ত পুরুষ ৭২ দশমিক ১৬ শতাংশ ও নারীর ২৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
আর পহেলা জুলাই পর্যন্ত যত জন মারা গেছে তার ৭১ দশমিক ১১ শতাংশ পুরুষ আর ২৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ নারী। তবে নারী ও পুরুষের মধ্যে ব্যবধান কমে আসার চিত্র আরও স্পষ্ট হয়েছে চলতি মাসের প্রথম সাত দিনে।
স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে পহেলা আগস্ট পর্যন্ত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে নারী ছিলো ৩২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এরপর ৬ অগাস্ট এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ০৮ শতাংশে।
আরেকজন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলছেন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অধিক সংক্রমণশীল, যাতে একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে নারীদের আক্রান্ত হবার প্রবণতা বেড়ে গেছে। “আর সংক্রমণ বাড়লে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়াটাই স্বাভাবিক। নারীদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে বলেই মৃত্যুর হারও বাড়ছে,” বলছিলেন তিনি।