কোভিডকালীন শিক্ষায় বেসরকারি খাতে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। বহু বেসরকারি স্কুল আর্থিক সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে, বেতন না পেয়ে অনেক শিক্ষক পেশা পরিবর্তন করেছে। কোভিডকালীন দেশের ৯১ শতাংশ শিশু, তরুণ মানসিক চাপে রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে মানসিক রোগে ভুগছে।
শনিবার ঘাসফুল আয়োজিত ‘কোভিড ১৯ : শিক্ষা ক্ষতি-পুনরুদ্ধার ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঘাসফুল চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ড. মনজুর-উল-আমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঘাসফুলের সিইও আফতাবুর রহমান জাফরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, কোভিডকালীন ক্ষয়ক্ষতি পুনরুদ্ধারে নাগরিক সমাজ ও শিক্ষক সমাজ নিয়ে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। পুনরুদ্ধার ও এগিয়ে চলার প্রক্রিয়াটি মানবকেন্দ্রিক ও জনবান্ধব হতে হবে। কোভিডকালীন ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনে আরও গবেষণা প্রয়োজন। ক্ষয়ক্ষতির ব্যবধান রয়েছে, যেমন ধনী-দরিদ্র, শহর-গ্রাম, আবার গ্রামাঞ্চলের হাওড়-বাওড়, পাহাড়, চর, দ্বীপ, উপকুলীয়, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কোভিডকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আবার জীবিকা হারিয়ে অনেকেই গ্রামে চলে যান। এক্ষেত্রে পুনরুদ্ধার কাজে গ্রামে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে অন্যদের পাঠদানের মাধ্যমে বেস্ট প্র্যাকটিস প্রচলন করতে হবে। শিক্ষাখাতে বাজেটের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমাদের শিক্ষাখাতের ক্ষয়ক্ষতির পুনরুদ্ধার ভাবনাকে এসডিজি-০৪ এর লক্ষ্য উদ্দেশ্য পূরণে সহায়ক হিসেবে তৈরী করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী প্রফেসর ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, অনতিবিলম্বে কোভিডকালীন শিক্ষাক্ষতির একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা জরুরি। কোভিডকালীন প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক এবং নিম্নমাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল এবং শিক্ষার্থীদের যে পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তার প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন উদ্যোগে সরকারের পাশাপাশি নাগরিক উদ্যোগের পরিসর বাড়ানো দরকার।
ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- এমেরিটাস প্রফেসর ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এম. এ.সাত্তার মন্ডল, বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ. এফ. ইমাম আলি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. গোলাম রহমান, সাবেক মুখ্যসচিব ও ইউসেপ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মো. আবদুল করিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. বেণু কুমার দে, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু রায়হান দোলন। তারা বলেন, কোভিডকালীন যে অনলাইন পাঠদান শিক্ষা সংস্কৃতি, দক্ষতা তৈরি হয়েছে তা ধরে রাখতে হবে, কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে ডিজিটাল অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করা হয়েছে। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে গ্রামেগঞ্জের সকল শিক্ষার্থীকে অনলাইন কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে।
উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন- দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারীরা। মেয়েরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের যে মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে, তাদের শিক্ষাজীবনে ফিরিয়ে আনতে হবে।