সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ছাড়াও মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে নতুন করে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে চার দফা দাবিতে চলমান অবরোধ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামী শনিবার (৬ জুলাই) সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে শুক্রবার (৫ জুলাই) অনলাইন ও অফলাইনে গণসংযোগ করা হবে। এছাড়া আগামী রোববার (৭ জুলাই) সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এর আগে তৃতীয় দিনের মতো লাগাতার আন্দোলনের অংশ হিসেবে বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর-টিএসসি হয়ে সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান করে।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কারী হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ১৯৭১ সালে বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু এই কোটা পদ্ধতির ফলে চাষার ছেলে চাষা, রাজমিস্ত্রীর ছেলে রাজমিস্ত্রী, মজুরের ছেলে মজুর থেকে যাবে। আমরা একই প্রশ্নে পরীক্ষা দেবো, একই প্রশ্নে রিটেন লিখবো, একই প্রশ্নে ভাইভার মুখোমুখি হবো। কিন্তু তারা কোটা সুবিধার কারণে একাই ১০০ সুবিধা পাবে, সেটা মেনে নেবো না। তাহলে কি জন্মই আমাদের আজন্ম পাপ?
প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সরকার কোটা চায় না, প্রশাসন কোটা চায় না, শিক্ষকরা কোটা চায় না, বিশ্ববিদ্যালয় কোটা চায় না, তাহলে কোটা চায় কে? সরকার যেখানে কোটা পদ্ধতি বাতিল করেছে, সেখানে কোন অদৃশ্য শক্তিবলে এই কোটা বহাল করা হয়? আমরা এই অদৃশ্য শক্তির হাত গুঁড়িয়ে দেবো।
অন্যদের মধ্যে নাহিদ ইসলাম বলেন, হাইকোর্ট শিক্ষার্থীদের প্রতি প্রহসন করছে। তারা কি এমন পরিপত্র জারি করলো যে ৫ বছরের মধ্যে সেটা আবার বাতিল করতে হচ্ছে? আমরা হাইকোর্টের বিরুদ্ধে না। তারা নিজেদের মতো কাজ করে যাবে, কিন্তু আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবো।
তিনি বলেন, আমরা দুপুর থেকেই শাহবাগ মোড় অবরোধের পর আজকের মতো কর্মসূচি শেষ করছি৷ আজকে আমরা ফিরে যাচ্ছি কিন্তু আগামীতে আরও বেশি শক্তি সঞ্চয় করে রাজপথে নামবো। আজকে সারাদেশে শিক্ষার্থীরা নিজেদের দাবি আদায়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। আশা করি, আমাদের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত তারা আমাদের সঙ্গে থাকবে৷ এ সময় আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ফলে রাজধানীতে বৈরী আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও ৪ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
৪ দফা দাবিগুলো হলো:
১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।
২. পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সমস্ত গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত)।
৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া।
৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
খুলনা গেজেট/এএজে