মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেফতার করার পর তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে যে রায় ঘোষণা করেছে কুয়েত- সেই রায়ের কপি পেয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন শুক্রবার রাজধানীর পূর্বাচল ক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রায়ের কপি পেয়ে ইতোমধ্যে সেটি জাতীয় সংসদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলেও জানান ড. মোমেন।
মন্ত্রী বলেন, পাপুলের রায়ের কপি আমরা পেয়েছি। ৬১ পৃষ্ঠার রায়টি আরবি ও ইংরেজি ভাষায় লেখা। আইন অনুযায়ী, রায়ের কপি মাননীয় স্পিকার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েছি। বাকি অ্যাকশান (ব্যবস্থা) তারা নেবে।
ড. মোমেন বলেন, আমরা রায়ের বারডিক্টটা (রায়) পেলাম। আমাদের দেশের মতো কুয়েতেও বারডিক্ট আসতে অনেক দেরি হয়, লিখতে অনেক সময় লাগে। আমরা এটা নিয়ে পেরেশানিতে ছিলাম। আপনাদের মিডিয়া প্রায়ই গিয়ে এটা নিয়ে জানতে চান, স্পিকারও প্রায়ই এটা নিয়ে ফোন করেন। রায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা যথাস্থানে পাঠিয়ে দিয়েছি।
পাপুলের বিরুদ্ধে সরকার কী ব্যবস্থা নেবে- জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রায়ের কপি জাতীয় সংসদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। পাপুলের বিরুদ্ধে এখন কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটা পার্লামেন্ট ঠিক করবে। তারা সিদ্ধান্ত নেবে।
এমপি পাপুল বাংলাদেশ সরকারে কাছে কোনো আইনি সহায়তা চেয়েছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো আইনি সহায়তা চান নাই। ওখানে তিনি (পাপুল) ব্যবসায়ী হিসেবে থাকেন এবং আমাদের কোনো ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট নিয়ে সেখানে তিনি যাননি। তিনি আমাদের মিশনের কোনো সাহায্য চাননি। কারণ সেখানে ওনার নিজেরই ভালো অবস্থান রয়েছে। ওনার ভিআইপি পাসপোর্ট আছে।
গত ২৮ জানুয়ারি এমপি পাপুলের ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় কুয়েতের একটি আদালত। কুয়েতের ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল ওসমান এ রায় ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে তাকে ৫৩ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।খবর আল-কাবাস ও আল-রাইয়ের।
এছাড়া পাপুলের কাজে সহযোগিতা করায় কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জাররাহসহ দেশটির দুই কর্মকর্তাকে ৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।পাশাপাশি প্রত্যেককে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৩ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুলকে গত বছরের ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক পাপুলের সেখানে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।
পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে পাপুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন। ১৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এখন তাকে রাখা হয়েছে কুয়েতের কেন্দ্রীয় কারাগারে।
কুয়েতি কর্মকর্তাদের কীভাবে কত টাকা ঘুষ দিয়েছেন, সে বিষয়ে রিমান্ডে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন পাপুল। যা প্রসিকিউটরদের বরাতে প্রকাশ করছে স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। সেখানে নাম আসায় কুয়েতের দুই এমপির বিরুদ্ধেও পাপুলকে বেআইনি কাজে সহযোগিতা এবং অর্থ পাচারে জড়িত থাকার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়।
মামলার তদন্তের সময় অভিযুক্ত হিসেবে ১৩ জনের নাম উঠে আসে। এর মধ্য থেকে চারজনকে তদন্তকালে বাদ দেওয়া হয়।
সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানি পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেয়ার কাজ করলেও কুয়েতে অন্যান্য ব্যবসার কাজও বাগিয়েছিলেন পাপুল।
এর আগে গালফ নিউজের খবরে বলা হয়েছিল, ‘জেনারেল ট্রেডিং অ্যান্ড কনট্রাক্টিং’ নামক লাইসেন্স ছিল পাপুলের। যার মাধ্যমে শিশুদের খেলনা থেকে শুরু করে অ্যানটিক কার্পেটের ব্যবসাও তিনি করতে পারেন। পাপুল ও তার কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ইতোমধ্যে জব্দ করেছে কুয়েত কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটাই অপরিচিত শহিদ ইসলাম পাপুল ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাক লাগিয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সমর্থন আদায় করে।
মহাজোটের প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছিলেন পাপুলকে কেন্দ্রীয়ভাবে তার জোট সমর্থন দেয়ায়। নির্বাচনের পর আরেক চমক ছিল পাপুলের স্ত্রীর সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া।
এর পর দেশের রাজনীতির চমক এই সংসদ সদস্য আবারও আলোচনায় আসেন গত ফেব্রুয়ারিতে কুয়েতের একটি সংবাদপত্রে বাংলাদেশি মানবপাচারকারীদের নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশের পর।
খুলনা গেজেট/ টি আই