খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলল ২৫০, বাংলাদেশ পেল ৫ উইকেট

কুয়েট শিক্ষকের মরদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মরদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য আবেদন করেছে পুলিশ।

খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে অস্বাভাবিক হিসেবে চিহ্নিত করায় বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে কুয়েটের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করার জন্য থানায় বিষয়টি জিডিভুক্ত করা হয়েছে।

এই জিডির পরিপ্রেক্ষিতে খানজাহান আলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) শাহরিয়ার হাসানের ওপর তদন্তের ভার ন্যস্ত করা হয়। যেহেতু সেলিম হোসেনের লাশ দাফন হয়ে গেছে তাই মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের একটি মাত্র উপায় লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা। এজন্য বিজ্ঞ আদালতের স্মরণাপন্ন হতে হবে। সে কারণে ওসি তদন্ত মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ময়নাতদন্তের আবেদন করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। যে কারণে আদালত মরদেহ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেননি। আদালত থেকে জানানো হয়, বিষয়টি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের এখতিয়ারভূক্ত। এজন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। মরদেহ যেহেতু কুষ্টিয়াতে দাফন করা হয়েছে তাই খুলনার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনটি কুষ্টিয়ার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাবেন।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন (৩৮)। সম্প্রতি কুয়েটের লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ফজলুল হক হলের বর্ডার কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান তার অনুগতদের ডাইনিং ম্যানেজার নির্বাচিত করার জন্য ড. সেলিমকে চাপ দেন।

ঘটনার দিন দাফতরিক কক্ষে অশালীন আচরণ ও মানসিক নির্যাতনেরও শিকার হন তিনি বলে অভিযোগ উঠেছে। ৩০ নভেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্ররা ক্যাম্পাসের রাস্তা থেকে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা শুরু করেন। পরে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘণ্টা ওই শিক্ষকের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পরে শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের জন্য ক্যাম্পাসের কাছে বাসায় যাওয়ার পর ২টায় তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন, তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে কিছু সাধারণ ছাত্রের জেরা, অপমান, অবরুদ্ধ করে রাখা ও মানসিক নির্যাতনে তার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দুই দফা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

শিক্ষক সেলিমের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে দোষীদের চিহ্নিত করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার (০২ ডিসেম্বর) দুপুরে একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করে শিক্ষক সমিতি। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষকরা।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুয়েট বন্ধসহ বিকেল ৪টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পর সাতটি আবাসিক হলে থাকা প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী হল ছাড়েন।

সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া পাঁচ সদস্যের নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!