খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) নতুন কমিটি নিয়ে বিতর্ক থামছেই না। কুয়েটের শিক্ষক হত্যায় দন্ডপ্রাপ্তকে সভাপতি করায় সমালোচনা চলছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে। এর মধ্যে নতুন সভাপতি রুদ্র নীল সিংহ শুভ’র একটি অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
অডিওতে ছাত্রলীগ সভাপতিকে বলতে শোনা যায়, ‘ভাই, যদি এক কোটি টাকা লাগে, আমি এক কোটি টাকা দেব। কমিটি আমার লাগবে।’ ১৩ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনে কমিটি গঠনের জন্য টাকা খরচ হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ফোনের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তির কাছে চাঁদা দাবি করছিলেন রুদ্র নীল।
অবশ্য রুদ্র নীল সিংহ বলেন, ‘ওই কণ্ঠ আমার নয়। বিভিন্ন সময় দেওয়া বক্তব্য যুক্ত করে ভুয়া ওই অডিও তৈরি করা হয়েছে।’
তবে কুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন নেতা নিশ্চিত করেছেন, অডিওর বক্তব্য রুদ্র নীলের।
গত ১০ অক্টোবর কুয়েট ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। কমিটিতে রুদ্র নীল সিংহ শুভকে সভাপতি, তরিকুল ইসলাম তিলককে সহ-সভাপতি, এ কে এম নিবিড় রেজাকে সাধারণ সম্পাদক, গোলাম রাব্বি সিয়ামকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, রাগিব হাসান মুন্না ও সুজাউল করিমকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।
এর মধ্যে কুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. সেলিম হোসেন মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত থাকায় সভাপতি রুদ্র নীল সিংহ শুভ ও সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম রাগিব আহসান মুন্নাকে দুই শিক্ষাবর্ষ বহিষ্কার ও আবাসিক হল থেকে চিরতরে বহিষ্কার করেছিলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষক হত্যা দন্ডপ্রাপ্তদের দিয়ে কমিটি গঠন করা নিয়ে গত সংবাদ প্রকাশ হয়। এনিয়ে সমালোচনা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সুধীমহলে। এরই মধ্যে গতকাল অজ্ঞাত এক ব্যক্তির সঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতির কথোপকথনের অডিও ফাঁস হলো।
অডিওতে রুদ্র নীল সিংহ শুভকে বলতে শোনা যায়, ‘কমিটি হইলে এই মাসে হবে, না হলে সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহে হবে। কেন্দ্রই করে দেবে, সম্মেলন-টম্মেলন কিচ্ছু হবে না। সবাই যে যার মতো দৌড়াচ্ছে।’ এরপর নানা কথার এক পর্যায়ে রুদ্র নীলন বলেন, ‘এখন আপাতত ৫০ হাজার টাকা দেন। আর যেদিন কমিটি সাইন হবে, তার একদুই দিন আগে বড় একটা অ্যামাউন্টের টাকা লাগবে। ধরেন আমার কাছে কিছু আছে। আরও কিছু যদি লাগে, সেডা আপনারে বললাম’।
কত টাকা লাগতে পারে এমন প্রশ্নে রুদ্র নীল বলেন, ‘ভাই, যদি এক কোটি টাকা লাগে, আমি এক কোটি টাকা দেব। কমিটি আমার লাগবে। যা লাগবে তাই দেব, তবে কমিটি লাগবে।’
ফোনের ওপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি ওই মুহূর্তে টাকা দিতে পারবেন না জানালে রুদ্রনীল বলেন, ‘কালকে পুরোটা না পারেন, কিছু টাকা দিতে পারবেন না? বাকিটা রোববারে দিলেন।’
এরপর বিভিন্ন কথার পর রুদ্র নীল বলেন, ‘ওপরওয়ালা যদি ক্ষমতা দেয়, সম্মান দেয়; তবে আমি আপনার উপকার ভোলব না। এই যে প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হওয়ার জন্য এত চেষ্টা করছি…ক্যারিয়ার নষ্ট করে কারণ কী? কারণ তো অবশ্য আছে। এই কারণগুলো যখন ডিল করব, তখন আমার নিজস্ব লোক তো লাগবে। ওই লোকগুলো কারা হবে…আপনারাই হবেন।’
খুলনা গেজেট/এইচ