এটি হাসপাতাল। সেখানে পড়ে আছে একটি লাশ। নোংরা কম্বলে ঢাকা, মাছি ভনভন করছে। পাশ দিয়ে যাওয়া লোকজন নাক–মুখে কাপড় চেপে ধরছেন।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত লাশটি এভাবেই হাসপাতালে। দাফন বা সৎকারের উদ্যোগ নেই। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় এই চিত্র দেখা যায়।
বিকেল সাড়ে চারটার দিকে হাসপাতালের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে লাশ সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হয়। ওয়ার্ডে দায়িত্বরত জ্যেষ্ঠ নার্স নাজমা খাতুন জানান, বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা সাত মিনিটে খাদিমুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি পুলিশের সহায়তায় অজ্ঞাত ওই নারীকে (৫৫) হাসপাতালে ভর্তি করেন। ঠিকানা লেখা হয়, চরপাড়া, জয়নাবাদ, কুমারখালী, কুষ্টিয়া। নারীর আর কোনো পরিচয় নেই। অনেকটা অচেতন অবস্থায় তাঁকে ভর্তি রেখে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
শুক্রবার সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তবে কেউ তাঁর লাশ নিতে কেউ আসেনি। মারা যাওয়ার পর বিষয়টি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ও ওয়ার্ড মাস্টারকে জানানো হয়। বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত লাশ সেখানেই পড়ে ছিল।
মুঠোফোনের সূত্র ধরে খাদিমুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পেশায় গাড়িচালক পরিচয় দিয়ে তিনি জানান, অজ্ঞাত ওই নারী বেশ কয়েক দিন ধরে ছেঁউড়িয়া লালন শাহ আখড়াবাড়ির সামনে ছিলেন। আখড়াবাড়ির প্রধান ফটকের পাশেই গতকাল তিনি অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিলেন। ৯৯৯–এ কল করলে পুলিশ যায়। সে সময় তিনি পুলিশের সহায়তায় ওই নারীকে ভ্যানে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান, এর বেশি কিছু তিনি আর জানেন না।
এদিকে সকালে মারা যাওয়ার পর পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও লাশের দাফন বা সৎকারের কোনো ব্যবস্থা হয়নি। এতে লাশের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। লাশ পড়ে থাকায় আশপাশের রোগীর স্বজনেরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
বিকেল পৌনে পাঁচটায় হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার শরিফুল ইসলাম দাবি করেন, ‘আমি কিছুক্ষণ আগে মুঠোফোনে বিষয়টি জানতে পারলাম। লাশটি মর্গে রাখা হচ্ছে।’
খুলনা গেজেট/এএ