সংঘর্ষের জেরে আড়াই মাস ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। হচ্ছে না ক্লাস-পরীক্ষাসহ একাডেমিক কোনো কার্যক্রম। স্থবির হয়ে পড়েছে প্রশাসনিক এবং উন্নয়ন কার্যক্রমও। এর আগে কখনও এত দীর্ঘ সময় ধরে কুয়েটের অচলাবস্থা দেখেনি কেউ। সেশনজট বেড়ে যাওয়ার শংকা করছেন সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী।
গত রোববার ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ক্লাসে যাচ্ছেন না শিক্ষকরা। কুয়েটের নবনিযুক্ত অন্তর্বর্তী উপাচার্য সোমবার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলাদাভাবে দীর্ঘ সময় বৈঠক করেন। তবুও সংকটের বরফ পুরোপুরি গলেনি।
বৈঠকে শিক্ষার্থীরা প্রজেক্টরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও পরবর্তী ঘটনা প্রবাহের ভিডিও এবং স্থিরচিত্র প্রদর্শন করেন। তারা উপাচার্যকে প্রায় আড়াই মাস ধরে ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় সেশনজটে পড়ার কথা জানান। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তিসহ পাঁচ দফা দাবি জানান তারা।
সভায় উপাচার্যের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কাছে আবারও ক্ষমা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিকেল ৩টায় শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে দ্রুত ক্লাস শুরু করার দাবি জানিয়ে উপাচার্যকে লিখিত চিঠি দেন শিক্ষার্থীরা।
এর আগে বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে সাধারণ সভা করে শিক্ষক সমিতি। সভায় শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
সভা শেষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, আমরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই। শিক্ষার্থীদের পাঁচ দাবির যেটুকু এখনও বাস্তবায়ন হয়নি, তা বাস্তবায়ন করা হোক। তবে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত এবং কটূক্তি করা শিক্ষার্থীদেরও শাস্তি দিতে হবে। আগামী সাত দিনের মধ্যে শাস্তি কার্যকর না হলে শিক্ষকরা কুয়েটের প্রশাসনিক সব কাজ থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পরে উপাচার্য বিকেল সোয়া ৩টা থেকে পৌনে ৬টা পর্যন্ত শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে শিক্ষকরা ১৮ ফেব্রুয়ারি ও এর পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরেন। সভা শেষে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাহিদুল ইসলাম বলেন, উপাচার্যের সঙ্গে সভায় আমরা আমাদের দাবি তুলে ধরেছি। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে যাব না বলে জানিয়েছি।
ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বহিরাগতদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে দেড় শতাধিক আহত হন। ওই দিন কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী কুয়েটের অপসারিত উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে মেডিকেল সেন্টারে অবরুদ্ধ করে রাখেন। ওই শিক্ষার্থীরা উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং গালাগাল করেন।
এ ঘটনার পর থেকে কুয়েটে ক্লাস, পরীক্ষাসহ একাডেমিক সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কুয়েটে আগে থেকেই প্রায় দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে। এর ওপর গত আড়াই মাস কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। এ অবস্থা চলমান থাকায় বেড়েছে সেশনজট।
শিক্ষার্থী মো. ওবায়দুল্লাহ বলেন, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি কুয়েটে ভর্তি হয়েছিলাম। ইতোমধ্যে পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে। আমরা ১৫-১৬ মাসের সেশনজটের মধ্যে ছিলাম। কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে, পরীক্ষা হবে– তা অনিশ্চিত।
অভিভাবক সাইফুল ইসলাম বলেন, এই সংকট না হলে আমার ছেলে এতদিনে পাস করে বেরিয়ে যেত। কিন্তু যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে আমরা অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন।
রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিসুর রহমান ভুঞা ও ছাত্র কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার জানান, উপাচার্যসহ আমরা সবাই চেষ্টা করছি যাতে দ্রুত সংকট নিরসন হয়ে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলী বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সংকট নিরসনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
সূত্র : সমকাল
খুলনা গেজেট/হিমালয়