কোরবানির ঈদের পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলেছে। নিস্তব্ধ ক্যাম্পাস। নেই কোন প্রাণচাঞ্চল্য। আবাসিক হলগুলোরও একই অবস্থা।
খুলনা প্রকৌশল প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)’ অচলাবস্থার চার মাস পূর্ণ হল। ১৮ ফেব্রুয়ারি বহিরাগত সন্ত্রাসী কর্তৃক কুয়েট শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ অচলাবস্থার সূত্রপাত হয়। সেই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ শিক্ষা কার্যক্রম চালু হবে এটা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। এ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী চরম হতাশা, অস্থিরতা, উদ্বিগ্ন এবং উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করছে।
একইভাবে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন। মোহাম্মদ আলী শেখ নামে তেমনই একজন অভিভাবক ফরিদপুর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ‘কুয়েট এডমিশন ইনফরমেশন ডেক্স’ পেজে কুয়েটে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি তার হতাশার কথা উল্লেখ করেছেন। নিচে পাঠকদের জন্য হুবহু সেটি তুলে ধরা হলোঃ
‘আসসালামুয়ালাইকুম
স্যার, অধম একজন অভিভাবক। আজ চার মাস পূর্ণ হলো কুয়েট অচল হয়ে আছে। আমার ছেলের আগামী ডিসেম্বরে পাশ করে বের হওয়ার কথা ছিল। সে আশা এখন দুরাশায় পরিণত হয়েছে। আমার সব সন্তানই লেখা পড়া করে । আমি মাসে মাসে টাকা দেই। কত কষ্ট হয় তা আমি জানি।
আশা করেছিলাম পরীক্ষা শেষ হলে আর টাকা পয়সা দিতে হবে না, সে সংসারের হাল ধরবে। এখন রাত ভর মোবাইল চালাতে ক্লান্ত,। আর দিনভর ঘুমাতে ঘুমাতে ক্লান্ত। গোসল, খাওয়া নামাজ পড়ার সময় হয় না। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। আমরা দুশ্চিন্তায় আছি কোন পদষ্খলন হয় কি না। কিংবা ঝড়ে পরে কি না।
আপনারা আছেন শিক্ষা উপদেষ্টার সাথে দেখা করে আর্থিক অচলাবস্থা নিরসন করার ধান্দায়। হাজার হাজার কোটির উন্নয়নের বিপরীতে একটি জীবন যদি ধ্বংস হয়ে যায়। একটি জীবনের চেয়ে কি উন্নয়ন বড়?একজন ভিসি এসেছিলেন আপনারা তাঁর সাথে অসহযোগিতা করার কারণে সে ভদ্রলোক চলে গেছেন।
করোনা মহামারীতে তাদের জীবনের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ২৪ শে গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতি হয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি হতে এখনো ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
আমরা কিন্তু আপনারদের অযৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য ক্লাস বর্জন করে যাচ্ছেন। ছাত্র ছাত্রীদের কোন অপরাধ নেই। বয়সের একটা ধর্ম আছে। ওদের ঐ বয়সটাই হলো তারণ্যের বয়স। এ বয়সের ধর্ম আদেশ অমান্য করা,অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, মিছিল করা আন্দোলন করা ইত্যাদি। আপনাদের ঘরে যদি এ বয়সের ছেলে থাকে তাহলে বুঝতে পারবেন।
আপনাদের অযৌক্তিক দাবি মতো কিছু ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়, তাহলে আদালতে রিট করলে তা টিকবে না। আপনারা একটা পক্ষ, আপনারা তদন্ত করে যদি আপনারাই বিচার করে ফাঁসি দেন তাহলে তা ন্যায় বিচার হয় না। বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রয়োজন। তাছাড়া এক খাসি দুই বার কুরবানী দেয়া যায়না। ওদের তো বহিষ্কার করে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ জন্যে আপনারা সঠিক পজিশনে নেই। তাই আপনারা আমাদের আর কষ্ট দিয়ে অভিশাপ কুড়াবেন না। আপনাদের ও ছেলে মেয়ে আছে? আজ যদি আমার জায়গায় আপনি থাকতেন তাহলে বুঝতে পারতেন।
তাই দয়া করে সহযোগিতা করুন, কর্মসূচি প্রত্যাহার করুন। বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে সহযোগিতা করুন। আল্লাহ পাক আপনাদের মঙ্গল করবেন।
আল্লাহ পাক আমাদের সঠিক বুঝ দান করেন।
মোহাম্মদ আলী শেখ, ভুক্তভোগী অভিভাবক, ফরিদপুর’।’
শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে অভিভাবকের ওই পোষ্টের নিচে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
কাজী নান্নু নামে একজন মন্তব্য করেছেনঃ ‘জনাব আপনার মতো আমি ও অনেক চিন্তায় আছি। একজন অভিভাবক হিসেবে।। জানিনা কবে এ-ই সমস্যার সমাধান হবে।। অনেক আশা নিয়ে সন্তান কে কুয়েটে ভর্তি করেছিলাম। আজকে আশা দুর আশায় পরিনত হতে যাচ্ছে’।
সালমা আক্তার নামে একজন মন্তব্য করেছেনঃ ‘এরা শিক্ষক নামের কলঙ্ক। শিক্ষকরা এভাবে ছাত্রদের জিম্মি করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় আন্দোলন করে না’।
হামিদুল হক চৌধুরী বাবলা নামে এক ভদ্রলোক মন্তব্য করেছেন, ‘অনুরোধ ভুক্তভোগীর বেদনা অনুধাবন করে মানবিক হোন এবং এখনই শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে এগিয়ে আসুন’।
শাওন নামে একজন লিখেছেন, ‘ উনারা ক্লাস না নিলে পদত্যাগ করুক। নিজেরাও নেবে না অন্যদেরও নিতে দেবে না। ক্লাস নিবে না, পদত্যাগ করবে, শেষ’।
খুলনা গেজেট/এইচ