কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের সব কার্যক্রম সম্পন্ন। আজ বুধবার (১৫ জুন) সকাল ৮টা থেকে ভোট চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, একটি উপজেলায় সাধারণ নির্বাচন ও তিনটি উপজেলায় বিভিন্ন পদে উপ-নির্বাচন, পাঁচ পৌরসভায় সাধারণ ও একটিতে একটি ওয়ার্ডে উপ-নির্বাচন, ১৩২টি ইউনিয়নে সাধারণ ও ৪৭টি ইউপিতে বিভিন্ন পদে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে কুসিক, ১৩২ ইউপি ও দুটি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে।
ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নিয়েছে ভোটের এলাকায়। নিরাপত্তা নিশ্চিতে তারা সদস্যরা মোতায়েন থাকবে নির্বাচনের পরের দিন পর্যন্ত।
এবারের নির্বাচনে মোট ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের ৬৪০ ভোটকক্ষের প্রতিটিতে বসানো হচ্ছে ইভিএম। মোট ৮৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করবে ভোটারসহ সকলের গতিবিধি। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে থাকছে সাতটি সংস্থার ৯২ জন দেশি পর্যবেক্ষক। এছাড়া থাকছে টিভি, পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকার পাঁচ শতাধিক সাংবাদিক।
নির্বাচনে মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। প্রার্থীরা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল, মো. মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি নেতা ও দুইবারের মেয়র), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মাসুদ পারভেজ খান। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। শেষতক মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে পাঁচ প্রার্থী।
এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলে ১৪০ জন প্রার্থী আছে ভোটের মাঠে। নির্বাচনে ৫ নম্বর ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০জন। এদের মধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী ভোটার এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে দুজন।
ওয়ার্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার রয়েছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে, সংখ্যা- ১৬ হাজার ৪৭৪ জন। আর সবচেয়ে কম ভোটার রয়েছে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে, ৩ হাজার ৮৯৪জন।
সাধারণ ভোটকেন্দ্রে তিনজন পুলিশ, আনসার ও ভিডিপিসহ মোট ১৫ জন নিয়োজিত থাকছে। এদের মধ্যে পাঁচজনের সঙ্গে থাকবে অস্ত্র। আর ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে চারজন পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি সদস্য থাকবে ১৬ জন। এদের মধ্যে ছয় জনের সঙ্গে অস্ত্র থাকবে।
এছাড়া ভোটের এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ, আনসার ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত প্রতি ওয়ার্ডের একটি করে মোট ২৭টি মোবাইল টিম ও ৯টি স্ট্রাইকিং টিম রয়েছে। এছাড়া রিজার্ভ টিম আছে ২টি।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ২৭টি মোবাইল টিম ও ১২ প্লাটুন বিজিবি নিয়োজিত থাকছে। ভোটের এলাকায় প্রচার শুরুর আগে থেকেই বিজিবির একটি অংশ অবস্থান নিয়েছে।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতে ইতিমধ্যে বৈধ অস্ত্র বহনের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে ১৭ জুন পর্যন্ত। ভোটের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে সকল প্রকার মিছিল।
২০১৭ সালের ৩০ মার্চ সর্বশেষ কুসিক নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচিত করপোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই বছর ১৭ মে। এক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ করার শেষ সময় ছিল চলতি বছরের ১৬ মে। কিন্তু বিগত কমিশন বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসায় আর তফসিল দেয়নি। ফলে অল্প সময়ের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এই সিটি পরিচালনায় দায়িত্ব দিতে হয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে। নির্বাচনের পর নতুন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করা পর্যন্ত তিনি করপোরেশন পরিচালনা করবেন।
বিএনপি নেতা হিসেবে মনিরুল হক সাক্কু ২০১৭ সালের নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। কুসিকের প্রথম নির্বাচনে ২০১২ সালেও তিনি জয়লাভ করেছিলেন। প্রথমবার বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় সাক্কু স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরেরবার বিএনপির টিকিটে ধানের শীষ প্রতীক নিয়েও জয়লাভ করেন। এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে এবং আজীবন দল থেকে বহিষ্কার করায় সাক্কু হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
উল্লেখ্য, দুটি পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করে সরকার।