স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ‘গতকাল (মঙ্গলবার) হঠাৎ করে শুনলাম পাহাড়ে ব্যাংক ডাকাতির একটা প্রচেষ্টা হয়েছে। আমাদের কাছে যা তথ্য আসছে কুকি-চিন যে গ্রুপটি রয়েছে, যারা আগেও বান্দরবানে একটি জায়গায় অবস্থান করে জঙ্গি বাহিনীর সঙ্গে আঁতাত করে একটা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছিল। র্যাব ও আর্মি সেই ঘাঁটি সরিয়ে দিয়েছে। ইদানিং কুকি-চিন আবার বিভিন্নভাবে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।’
বুধবার (৩ এপ্রিল) সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের আইজিপি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে অবস্থান করছেন। রুমাতে সোনালী ব্যাংকে ঢোকার আগে বৈদ্যুতিক যে সাব-স্টেশন ছিল সেটাকে বন্ধ করে তারা ব্যাংকের দিকে অগ্রসর হন। সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশ ও ব্যাংকের ম্যানেজার সবাই তারাবির নামাজে ছিল। সেই সময় তারা ঢুকে দুই পুলিশকে আহত করে দুটি এসএমজি ও আটটি চাইনিজ রাইফেল লুট করে। উপজেলা কমপ্লেক্সে আনসারদের শর্টগানগুলোও তারা নিয়ে নেয়।’
তিনি বলেন, ‘তারা সোনালী ব্যাংকের একটা ভল্ট ভাঙেন, আরেকটা মনে হয় ভাঙতে পারেনি। অফিসিয়াল নিউজ এখনও পাইনি। আমরা যতটুকু শুনেছি, তাই বলছি। সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজারকে জিম্মি করে নিয়ে গেছে। কত টাকা নিয়েছে, সেটা এখনও অফিসিয়ালি আসেনি।’
আসাদুজ্জামান খান আরও বলেন, ‘আজকে দিনের বেলায় আমরা দেখলাম, থানছিতে কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে আক্রমণ করেছে। এই অপারেশনটা এখনো চলছে। আমাদের পুলিশ সেখানে গোলাগুলি করছে। সেখান থেকে কত টাকা নিয়েছেন বা ক্ষয়ক্ষতি কী পরিমাণ তা এখন জানাতে পারব না। এ বিষয়ে আমাদের যা যা করার, আমরা করব। এখানে যারা জড়িত বা করেছে আমরা সবগুলোর ব্যবস্থা নেব।’
সরকারের যথেষ্ট পরিমাণ ফোর্স রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সেখানে পুলিশ ও বিজিবি রয়েছে। প্রয়োজনে সেখানে সেনাবাহিনীও যাবে। আর এ বিষয়টি আমাদের কাছে একেবারে নতুন। থানছি একটি শান্তিপূর্ণ এলাকা। এটা পর্যটকদের জন্য ভ্রমণের মূল জায়গা। রুমাও শান্তিপূর্ণ জায়গা ছিল, সেখানে বেশকিছু দিন ধরে শান্তি বিরাজ করছিল। সেই জায়গা তারা কেন বেছে নিল, সেই সবকিছু দেখার বিষয় রয়েছে। এগুলো দেখে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব, ইনশাআল্লাহ।’
ভারতীর সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা নিয়ে দু’দেশের সঙ্গেই আলোচনা হচ্ছে। সীমান্তে ওই দেশে একটা চক্র রয়েছে, আমাদের দেশেও একটা চক্র রয়েছে। যারা নাকি অবৈধ ব্যবসা করে। দেশের পণ্য ওই দেশে নিয়ে যায়, ওই দেশের পণ্য এদেশে নিয়ে আসে। সীমান্ত পাড়ে যারা থাকেন তারা দুর্ধর্ষ, তাদের দুর্ধর্ষই বলব, তারা কোনো নিয়মকানুন মানেন না। কখনও ওই দেশে ঢুকে যায়, আবার কখনও এই দেশে চলে আসে। তখন সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে ঘটনা ঘটে যায়।’
সীমান্তে শুধু তো বাংলাদেশের মানুষই হতাহত হচ্ছে— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘এটা সঠিক নয়। বাংলাদেশের মানুষ ওই দেশে যখন ঢুকে যায়, তখন ক্যাজুয়ালটি হয়। ওই দেশের মানুষ যখন আমাদের দেশে আসে, আমরা ফলো করি যাতে নিহত না হয়। ওই দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে, যেন নন লেথাল অস্ত্রগুলো (প্রাণঘাতী নয়) ব্যবহার করে, যাতে ক্যাজুয়ালিটি না হয়।’
ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে বুয়েটে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কাছে এ বিষয়ে তথ্য নেই, তবে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিচ্ছে, সেটাই সবাই মেনে চলবে। যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিষিদ্ধ নয়, বুয়েটে নিষিদ্ধ হয়েছিল, সেটার ওপর একটা আদেশ হয়েছে।’
খুলনা গেজেট/ এএজে