সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ ও সাবেক পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে নেয়া হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে বুধবার তাদের নিয়ে রওনা দেয় পুলিশ। গাজীপুরে এসে পৌঁছায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে। কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার-৪ এ রাখা হয়েছে তাদের। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার গিয়াস উদ্দিন।
আলোচিত এ মামলার রায় গত ৩১ জানুয়ারি ঘোষণা করেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল।
রায়ে দু’জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এ ছাড়া সাতজনকে খালাস দেয়া হয়েছে।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন টেকনাফ থানার এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, এএসআই সাগর দেব ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা, বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিন।
খালাস পাওয়া সাতজন হলেন টেকনাফ থানার কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এপিবিএনের সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরে এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া রাশেদ ‘লেটস গো’ নামের একটি ভ্রমণবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র বানানোর জন্য প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার একটি রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন। ওই কাজে তার সঙ্গে ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।
কক্সবাজারের পুলিশ সে সময় বলেছিল, সিনহা তার পরিচয় দিয়ে তল্লাশিতে বাধা দেন। পরে পিস্তল বের করলে চেকপোস্টের পুলিশ তাকে গুলি করেন।
ওই বছরের ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়।
সিনহা নিহতের ছয় দিন পর লিয়াকত আলী, প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে এই হত্যায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার কথা জানিয়ে টেকনাফ থানায় করা মামলার তিন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারী আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামিদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
প্রায় সাড়ে চার মাস তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১৫-এর কক্সবাজারের তৎকালীন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম ১৫ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
খুলনা গেজেট/এনএম