আগামী ১৩ নভেম্বর সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে রাজা বসন্ত রায়ের স্মৃতি বিজড়িত বসন্তপুর নৌবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-এমপি। খুলনার বিভাগীয় জনসভা থেকে ভার্চুয়ালি এই নৌ বন্দরের ভিত্তি প্রস্তরের উদ্বোধন করবেন তিনি। উদ্বোধনকে ঘিরে বর্তমানে কালিগঞ্জের বসন্তপুরে নৌ-বন্দরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য নাম ফলকের জায়গা নির্বাচন করেছে বিআইডব্লিটি কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বসন্তপুর নৌ-বন্দর সাব কমিটির আহবায়ক ও সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহম্মেদ স্বপন।
প্রসঙ্গতঃ ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় বন্ধ হয়ে যায় পাকিস্থান আমলের বসন্তপুর নৌ-বন্দর। এরপর থেকে বন্দরটি পুনরায় চালুর দাবি জানিয়ে আসতে থাকেন স্থানীয়রা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বসন্তপুর নৌ বন্দর চালু দাবিটি জোরালো হয়। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ সরকারের তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার সুবাদে বসন্তপুর নৌ-বন্দরটি চালুর উদ্যোগ নেয় সরকার এবং গত বছরের ২৫ অক্টোবর বসন্তপুর নৌবন্দরের গেজেট প্রকাশ করা হয়।
এদিকে, দীর্ঘ ৫৭ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া নৌ-বন্দরটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেয়ায় বন্দরজুড়ে বসবাসরত মানুষের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। বন্দরটি চালু হলে ওই এলাকার উন্নয়নসহ ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃদেশীয় ব্যবসা-বানিজ্য সম্প্রসারণের পাশাপাশি বিনোদন প্রেমিদের জন্য একটি পর্যটন এলাকায় পরিনত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বসন্তপুরে ব্রিটিশ আমল থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ব্যবসা-বানিজ্যের জন্য গড়ে উঠেছিল এই নৌ-বন্দর। জমকালো এই নৌবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায় এখান থেকে আরও ৫৭ বছর আগে। তবে এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কিছু স্থাপনা। আছে একটি জরাজীর্ণ কাস্টমস ভবন।
কাকশিয়ালী-ইছামতি-কালিন্দী-এই তিন নদী এক মোহনায় মিশেছে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের বসন্তপুর গ্রামে। এখানে এক সময় ছিল সমৃদ্ধ নৌ-বন্দর। বানিজ্য হতো ভারতের সাথে। কাছেই সীমান্তের ওপারে ভারতের হিঙ্গলগঞ্জ। সেখান থেকে বেশি দুরে নয় কলকাতা শহর। ফলে এখানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ব্যবসা-বানিজ্যের রয়েছে যথেষ্ট সম্ভাবনা। এখন এখানে পুরনো বাণিজ্যের কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে জরাজীর্ণ কাস্টমস ভবন।
এছাড়াও রয়েছে তৎকালিন সময়ের ইমিগ্রেশন অফিসসহ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের স্টাফ কোয়ার্টার। নৌ-বন্দর চালু হলে অর্থনৈতিক প্রাণ-চাঞ্চল্য ফিরে আসবে ওই এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, বন্ধ হয়ে যাওয়া বসন্তপুর নৌ বন্দরের এলাকায় ১৪ বিঘা সরকারি খাস জমি রয়েছে। সম্প্রতি মাপ জরিপ করে এর সীমানাও নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া গত বছল পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর কোলকাতার সঙ্গে দূরত্ব কমে যাওয়ায় ভোমরা বন্দরের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। তাই বসন্তপুর নৌ-বন্দরটি চালু হলে ভোমরা বন্দরের উপর চাপ কমার পাশপাশি দুই দেশের ব্যবসা বাণিজ্যর সম্প্রসারণ ঘটবে। পাশাপাশি বন্ধ হবে চোরাচালান।
এ ব্যাপারে বসন্তপুর নৌ-বন্দর সাব কমিটির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এজাজ আহম্মেদ স্বপন জানান, দীর্ঘদিন ধরে বসন্তপুর নৌ-বন্দরটি পুনরায় চালুর দাবি জানিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। যেটা আওয়ামীলীগ সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার সুবাদে আজ বসন্তপুর নৌ-বন্দর ঘিরে আশায় বুক বেঁধেছেন দক্ষিণ জনপদের মানুষ।
তিনি বলেন, কালিগঞ্জের বসন্তপুর নৌ-বন্দর চালু হলে কোলকাতার হলদিয়া বন্দর, খিদিরপুর ডক, বসিরহাট, হাসনাবাদ থেকে নৌপথে আমদানি ও রপ্তানিকৃত পণ্য পরিবহনে খরচ অনেক কম পড়বে। বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন মান্দার বাড়িয়া সি-বীচ, হেরোইন পয়েন্ট ও দুবলারচর হয়ে রায়মঙ্গলের মধ্য দিয়ে ডায়মন্ডহারবার, পূর্ব-মেদিনীপুরের বন্দর এবং দীঘা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত দু’দেশের ব্যবসা বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে।
তিনি আরো বলেন, প্রতি বছরে ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ, দেবহাটা, শ্যামনগর ও আশাশুনির লক্ষাধিক মানুষের নিরাপদ রুট হবে বসন্তপুর নৌ-বন্দর।
এছাড়া কাঁকশিয়ালী নদীকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে প্রবাহমান করে খোলপেটুয়া নদীর সাথে সংযুক্ত করলে নৌ পথে খুলনা অঞ্চলসহ রাজধনী পর্যন্ত অবাধ নৌ-বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত হবে। এরফলে এদিকে সরকার যেমন পাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব, ঠিক তেমনই ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ মিলবে বহু মানুষের।
এজাজা স্বপন বলেন, অগামী ১৩ নভেম্বর খুলনার জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এই নৌ বন্দরের ভিত্তি প্রস্তরের উদ্বোধন করবেন। ইতিমধ্যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কাজ প্রায় শেষের পথে।
সবকিছু হঠাৎ করে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ১৩ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর খুলনার জনসভায় দলীয় নেতাকর্মীরা সবাই যোগ দিবেন। যে কারণে এখানে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তবে এলাকাবাসীর উদ্যোগে ওইদিন এখানে একটা দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এমএম