খুলনা, বাংলাদেশ | ১৭ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  সালমান এফ রহমানকে আরও ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ ইরানের, ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে কয়েকটি

কারাগারে যেভাবে দিন কাটছে ভিআইপিদের

গেজেট ডেস্ক

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আওয়ামী লীগ আমলের প্রভাবশালী উপদেষ্টা, মন্ত্রী-এমপি, অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও সাবেক পুলিশ প্রধানরা এই মুহূর্তে কেমন আছেন? এক অর্থে তারা আপাতত সবাই ভালো আছেন। কারা ক্যান্টিনের খাবার খাচ্ছেন , সুস্থ আছেন বলেই কারা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে তাদের দিন কাটছে অন্য সাধারণ বন্দীদের মতোই। অবশ্য তারা নানাভাবে কারাগারে দায়িত্বরতদের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে শীর্ষ কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা থাকার কারণে তারা আপাতত বাড়তি সুবিধা নিতে পারছেন না।

কারাবিধি অনুযায়ী যে সব সুবিধা তারা প্রাপ্ত, শুধু সেটুকু তাদেরকে দেয়া হচ্ছে বলে কারা কর্মকর্তারা দাবি করছেন। এর মধ্যে কোনো কোনো প্রভাবশালী মন্ত্রী না-কি কারাগার কর্তৃপক্ষকে জেল কোডের সুযোগ-সুবিধা না দেয়ার ঘটনায় হুমকি দিচ্ছেন। বর্তমানে এই কারাগারের চম্পাকলি সেলে (ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ ৩২ জন ভিআইপি বন্দী অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে ২৮ জনকে ডিভিশন দেয়া হয়েছে। বাকি ৪ জন সাবেক ছাত্রনেতা।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে দায়িত্বরত একটি গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, কারাগারে যেসব রাজনৈতিক বন্দীসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বন্দীরা অবস্থান করছেন তাদেরকে কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের সাথে যারা সাক্ষাৎ করতে আসছেন তাদেরও নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে। এদের মধ্যে নিয়ম অনুযায়ী যাদের দেখা সাক্ষাৎ হওয়ার কথা তাদেরকে জেল কোডের বিধি মেনেই কারা কর্তৃপক্ষ সাক্ষাৎ করাচ্ছেন। বাইরের খাবার ভেতরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। কারাগারের ভেতরে ক্যান্টিন রয়েছে। সেখান থেকেই তারা তাদের পছন্দের প্রয়োজনীয় খাবার কিনে খেতে পারছেন। তবে গোয়েন্দাদের মধ্যে একজন নয়া দিগন্তকে বলেন, কারাগারের অভ্যন্তরে গোয়েন্দা সদস্যদের ঢোকার নিয়ম না থাকার কারণে কারা অভ্যন্তরের অনেক গোপন তথ্যই তারা সংগ্রহ করতে পারছেন না।

ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা হেলিকপ্টারে চড়ে ভারতে পালিয়ে যান। পতন ঘটে আওয়ামী লীগের। এর পর থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রী, এমপি, প্রভাবশালী রাজনৈতিক উপদেষ্টা, নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দেন। এর পর গোপন আস্তানা থেকে একে একে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের হাতে তারা গ্রেফতার হতে থাকেন। র‌্যাব, পুলিশ ও ডিবির হাতে ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক এমপি, মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও পুলিশের সাবেক দুই আইজি, পত্রিকার সম্পাদকসহ অনেকেই গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে আটক আছেন।

গ্রেফতারের পর থেকেই তাদের উপর কঠোর নজরদারি শুরু করে কারা কর্তৃপক্ষ। প্রথম দিকে আওয়ামী সরকারের মনোনীত আইজি প্রিজন আনিসুল হক দায়িত্বে থাকায় এসব মন্ত্রী এমপিরা কারাগারে বাড়তি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে নতুন আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন যোগদান করার পর পরই এসব ভিআইপি বন্দীর ওপর কঠোর নজরদারি শুরু হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দী রয়েছেন ২৮ জন। অপর দিকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে রয়েছেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি দোতলার ডিভিশনপ্রাপ্ত ওয়ার্ডে রয়েছেন।

গতকাল কারা অধিদফতরের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ওদের সব কর্মকাণ্ড মনিটরিং করার জন্য ইতোমধ্যে শক্তিশালী জ্যামার বসানো হয়েছে। যাতে তারা কোনোভাবেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বাইরের কোথাও কারো সাথে যোগাযোগ করতে না পারেন। শুধু তাই নয়, তারা সরকারিভাবে তাদের পরিবারের সাথে নিয়ম অনুযায়ী কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের যখন মোবাইলে কথা বলানোর সুযোগ দেয়া হচ্ছে, তখন সেখানে কারা কর্মকর্তা ছাড়াও কারা গোয়েন্দাদের উপস্থিতিতেই কথা বলানো হচ্ছে।

এ সময় শর্ত দেয়া থাকে, শুধু মন্ত্রী-এমপিদের নামে রেজিস্টার্ড সিমেই (নাম্বারে) তারা তাদের পরিবারের সাথে কথা বলতে পারবেন এবং তাদের ওই কথা বলার সময় পুরোটাই রেকর্ড করে রাখা হচ্ছে বলে জানান তারা। এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, জেলকোডের নিয়ম অনুযায়ী ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দীরা যা পাবেন তাদের সেই সুবিধাগুলোই দেয়া হচ্ছে। মোট কথা সাধারণ বন্দীরা যে সুবিধা পাচ্ছেন তাদেরকে সেই সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বাড়তি সুবিধা দেয়ার সুযোগ নেই। যারা জেলের ভেতরে দায়িত্বে আছেন তাদেরও আইজি প্রিজন্স স্যারের নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট দিয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে। যদি কোনো উল্টাপাল্টা তথ্য পাওয়া যাবে, সাথে সাথে ওই সব জেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের চম্পাকলি সেলকে ডিভিশন সেল ঘোষণা করা হয়েছে। এখানেই রয়েছেন দেশের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ, খুনি ও চিহ্নিত অপরাধী হিসাবে ধরা পড়া সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও পুলিশ কর্মকর্তারা। ওই সূত্র আরো জানায়, চম্পাকলি সেলের আশপাশে ৩টি শক্তিশালী জ্যামার বসানো হয়েছে কয়েক দিন আগে।

তারা বলছেন, প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ওই এলাকাগুলো কারারক্ষীদের নজরদারির মধ্যে থাকে। এরপর যদি কেউ বিদ্যুতের তার খুলে ফেলে তা হলে যেই লাউ সেই কদু! এ ব্যাপারে কারাগারে যাদের (ডেপুটি জেলার, কারারক্ষী) দায়িত্ব দেয়া রয়েছেন তাদের ওপরে আরো বেশি নজরদারি করা দরকার বলে তাদের মন্তব্য। নতুবা কারাগারে বিগত সরকারের নিয়োগ মন্ত্রীদের সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরাপদে থেকে তাদের প্রিয় মানুষদের নানা সুবিধা দেবে এটাই স্বাভাবিক।

সম্প্রতি এই কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারসহ ৪ জন কারাগারের জেল সুপারকে গত সরকারের খাস লোক চিহ্নিত করে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

গতকাল কারাগারের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, দু’দিন আগে চম্পাকলি সেলে আটক সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ অন্য ভিআইপি বন্দীরা কেমন আছেন সেই খোঁজ নিতে যান জেলার। এ সময় আনিসুল হক কথা বলার ছলে জেলারকে ‘থ্রেট’ দেন। সাবেক আইনমন্ত্রী তাকে নাকি বলেছেন, ‘জেল কোডে কী কী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেটি কিন্তু আমি ভালোভাবে জানি এবং পড়েছি। আমাকে জেল কোডের সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। এই অভিযোগে আপনার বিরুদ্ধে কিন্তু মামলা হতে পারে’।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!