সরকারের সিদ্ধান্তে চলতি বছরের ১ জুলাই সারাদেশে বন্ধ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল। যার মধ্যে খুলনায় রয়েছে ৯টি মিল। এসব মিলে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে কর্মরত ছিল প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক। যার বড় একটি অংশ নারী শ্রমিক। করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা শ্রমিকরা।
তবে পুরুষ শ্রমিকরা বিকল্প পেশা হিসেবে বাদাম বিক্রি, সবজি বিক্রি, ইজিবাইক ও রিক্সা চালানো শুরু করলেও কাজ মিলছে না নারী শ্রমিকদের। যার ফলে খুবই মানবেতর জীবন কাটছে নারী শ্রমিকদের। বিশেষ করে যে সকল নারীদের ওপর পরিবারের সবাই নির্ভর করে থাকে তাদের এখন ধার দেনা করে চলতে হচ্ছে। ইচ্ছা করলেই তারা পুরুষদের মত পেশা বদলাতে পারছেন না।
করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে হোটেল বন্ধ, ছাত্রাবাস বন্ধ, বাড়িতে কাজ করার সুযোগও কমেছে অনেক। এরপরও লজ্জা উপেক্ষা করে অনেক শ্রমিকই দিন মজুরির সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেছে। তবে সেখানেও রয়েছে মজুরি বৈষম্য।
চলতি বছরের ১ জুলাই সরকারের সিদ্ধান্তে খুলনার রাষ্ট্রায়াত্ব নয়টি জুট মিল বন্ধ হয়। এগুলো হল স্টার জুট মিলস লি, দৌলতপুর জুট মিলস লি, খালিশপুর জুট মিলস লি, প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলস লি, ক্রিসেন্ট জুট মিলস লি, আলীম জুট মিলস্ লি, ইস্টার্ন জুট মিলস লি, যশোর জুট ইন্ডাষ্ট্রিজ লি এবং কার্পেটিং জুট মিলস লি। এসব মিল গুলোতে স্থায়ী শ্রমিক ছিল ১৪ হাজারের বেশি এবং অস্থায়ী শ্রমিক ছিল প্রায় ২৫ হাজার।
সরেজমিনে মিল এলাকায় গিয়ে কথা হয় একাধিক শ্রমিকের সাথে। ছেলে-মেয়েদের মুখে খাবার তুলে দিতে লজ্জাকে উপেক্ষা করে দিয়ে কাজ খোঁজ করছেন মহিলা শ্রমিকরা। যা কাজ পাচ্ছেন তা দিয়ে সংসার চালাতে পারছেন না। যার ফলে প্রতি মাসেই ধারদেনা করা লাগছে। মাসের পর মাস বকেয়া হয়ে যাচ্ছে ঘরভাড়া। অনেক পরিবারে দিনে একবার রান্না হচ্ছে।
প্লাটিনাম জুট মিলের বদলি শ্রমিক শিউলি বেগম জানান, মাসে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা মজুরি মিলত। মিলের পাশে রেললাইনের বস্তিতে ভাড়া করা ঘরে পরিবার নিয়ে তার ভালই চলত। গত তিন দিন তার বাড়িতে হাঁড়িতে আগুন দেওয়া হয় নি। তিনি মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু করোনার কারণে জুটছে না কাজ।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক কোহিনুর বেগম প্রায় ১৬ বছর আগে মিলটিতে চাকুরি শুরু করেন। মাসে ১২-১৩ হাজার টাকা মজুরি পেতেন। সম্প্রতি তিনি মিলের সামনে একটি হোটেলে কাজ নিয়েছেন। যেখানে দিনে তাকে ১’শ টাকা দেওয়া হয়।
সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক শ্রমিক নেত্রী শাহানা শারমিন খুলনা গেজেটকে বলেন, করোনা কালীন সময়ে মিল বন্ধ হওয়ায় শ্রমিকরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। যা কাছ থেকে না দেখলে বোঝা যাবে না। লজ্জাকে উপেক্ষা করে দিয়েও মিলের মহিলা শ্রমিকরা কাজ পাচ্ছে না। খুলনাঞ্চলের পাটকল শ্রমিক ও তাদের পরিবারের মানবেতর জীবনযাপন বিবেচনা করে অতিদ্রুত মিলগুলো পুনরায় চালু করার দাবি করেন।
খুলনা গেজেট/নাফি