চৈত্রের খরতাপে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) সড়কের পাশে বিষন্ন মনে ভ্যানের উপর বসে আছেন এক বৃদ্ধ। নাম তার আবুল কাশেম। বয়স ৭০ এর কাছাকাছি। জানা গেল তিনি ভ্যানের চালক এবং নিয়মিত কুয়েটের আশেপাশের সড়কগুলোতে ভ্যান চালান।
কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই আবুল কাশেম বলতে শুরু করলেন তার সংগ্রামী জীবনের কথা। জানান, ৫ কন্যা সন্তানের জনক তিনি। বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ৩ মেয়ের এখনও বিয়ে দেননি। তারা পড়াশুনা করছে। ১ জন ৯ম শ্রেণীতে, পরের জন ৮ম শ্রেণীতে এবং সবার ছোট জন ৭ম শ্রেণীতে।
আবুল কাশেমের ছেলে নেই। স্ত্রী এবং তিন মেয়ে নিয়ে আড়ংঘাটা থানার তেলিগাতী জামিলের মেয়ের ভাড়া বাড়িতে থাকেন। এজন্য তাকে প্রতি মাসে বাসা ভাড়া বাবদ গুণতে হয় ২ হাজার টাকা।
সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। নিজস্ব কোন জায়গা জমি কিংবা সংসারে সাপোর্ট দেওয়ার মতো তেমন কিছু নেই। পৈত্রিক ভিটা সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলায়। ৫ দশক পূর্বে রুটি রুজির তাগিদে খানজাহানআলী থানার ফুলবাড়িগেট এলাকায় আসেন। ভ্যান চালানোর পূর্বে তিনি মুদি দোকানের ব্যবসাসহ অন্যান্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
আবুল কাশেম বলেন, ‘৩০-৪০ বছর ধরে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। এছাড়া করার কিছু নাই। খুব কষ্টে দিন কাটাই। কি করবো? ঠিক মতো খাটতে পারি না। বয়স হয়েছে। বয়সের কারণে সব দিনতো ভ্যান চালাতে পারি না। আমি খুব অসহায়। কষ্টে দিন কাটায়। কি করবো বলুন। আমি খুব অসহায় বাবা। করার কিছু নাই। না কিনতে পারি একটু গোশত, মাছ, না কিনতে পারি একটু ভালো তরকারি। রোজার মাস একটু খেজুরও কিনতে পারি নাই। বাড়িওয়ালা পরের বাসায় কাজ করে। সে বাসা থেকে মাঝেমধ্যে ২/১ টুকরো মাংস, একটু তরকারি দেয়।
ভ্যান চালিয়ে কোনদিন ৩শ’, কোনদিন ৪শ’, ৫শ’, ৬শ’ টাকা হয়। বৃদ্ধ মানুষ দেখে মাঝেমধ্যে স্কুল কলেজের ছাত্ররা কিছু সহযোগিতা করে। তিনটা মেয়ে স্কুলে পড়াশোনা করে। তাদের খরচ মেটাতে হয়। সরকারি কোন সহযোগিতা পাই না। ভ্যান চালিয়ে যা ইনকাম হয় তাই দিয়ে বাসা ভাড়া দিয়ে, কোনমতে দিন চালাচ্ছি।’