আর মাত্র ৬দিন বাকি। আগামী ৩০ জানুয়ারি শনিবার কলারোয়া পৌরসভার তৃতীয় বারের মত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। শেষ মূহুর্তের প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সকল প্রার্থীরা। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কাছে নিজের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি তুলে ধরে সমর্থন ও দোয়া প্রার্থনা করছেন প্রার্থী ও তার কর্মী সমর্থকরা।
বিগত ১৯৯০ সালে কলারোয়া পৌর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দীর্ঘবছর সীমানা জটিলতার মামলা থাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। সেই মামলা নিষ্পত্তির পর ২০১১ সালে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ আক্তারুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় বারে তিনি দলীয় মনোনয়নে মেয়র হন। কিন্তু নানা কারনে তিনি মেয়র হিসাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। এজন্য অধিকাংশ সময়ে কলারোয়া পৌরসভার প্রশাসনিক কার্যক্রম চলেছে ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিয়ে। এবারে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নিজে এবং স্ত্রী নার্গিস সুলতানাকে দিয়ে মনোনয়ন পত্র ক্রয় করান। প্রতীক বরাদ্দের পর ১৮ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে আক্তারুল ইসলাম নিজে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দিলেও তার স্ত্রী নার্গিস সুলতানা এখনো নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় টিকে আছেন।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও কলারোয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৫জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরা হলেন, আওয়ামী লীগের মাস্টার মনিরুজ্জামান বুলবুল (নৌকা), বিএনপি’র শেখ শরীফুজ্জামান তুহিন (ধানের শীষ), স্বতন্ত্র সাজেদুর রহমান খাঁন চৌধুরী মজনু (মোবাইল ফোন), আক্তারুল ইসলাম (নারিকেল গাছ), তার সহধর্মিণী নার্গিস সুলতানা (জগ)। তবে ১৮ জানুয়ারি সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দেন দুই বারের নির্বাচিত মেয়র আক্তারুল ইসলাম। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে কমিশনের তালিকায় তিনি বৈধ প্রার্থী হিসাবে বিবেচিত হবেন। ব্যালটে তার প্রতীক থাকবে। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৯ জন ও সংরক্ষিত ৩ টি আসনে (মহিলা) কাউন্সিলর পদে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন করার আহবানও জানান তিনি।
কলারোয়া পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ২১ হাজার ২৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ২৮৪ ও মহিলা ভোটার ১০ হাজার ৯৯৬ জন।
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে কলারোয়া পৌর সভার সর্বত্রই এখন চলছে নির্বাচনী আলাপ-আলোচনা। আগামী পাঁচ বছরের জন্য কে হবেন পৌর পিতা, এনিয়ে হাট-বাজার, দোকান পাট, শপিংমল ও চায়ের স্টলসহ সর্বত্রই চলছে আলোচনা। চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে রয়েছেন একজন বিদ্রোহী। একইভাবে বিএনপির প্রার্থীর বিদ্রোহী স্বামী-স্ত্রী থাকলেও শেষ মুহুর্ত্বে স্ত্রীর সমর্থনে স্বামী ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন। ফলে দলীয় কোন প্রার্থীই স্বস্তিতে নেই। ভোটাররাও অনেকটা পড়েছেন দ্বিধাদ্বন্দে। কাকে ছেড়ে কাকে ভোট দিবেন। আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে জেলা আ’লীগের নেতারাও একজোট হয়ে কাজ করছেন। তারা কলারোয়ায় গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।
অপরদিকে সাতক্ষীরার আদালতে চলমান শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলা নিয়ে একরকম অস্বস্তিতেই আছেন কলারোয়া উপজেলা বিএনপি’র নেতারা। সে কারণে বিএনপি প্রার্থী অল্প কিছু সংখ্যক কর্মী সমর্থককে নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সাথে প্রচারণায় পিছিয়ে নেই সাবেক মেয়র আক্তারুল ইসলাম এর সহধর্মিণী নার্গিস সুলতানা। তিনিও নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে ভোট নিরপেক্ষ হলে ফলাফল আগের দুই বারের মত হলেও হতে পারে এমন ধারণা অনেকের। ফলে কে হবেন কলারোয়া পৌর সভার মেয়র তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত।
খুলনা গেজেট/এনএম