বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন, কলকাতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদানের ৫০ বছরপূর্তি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করেছে। বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতার ইতিহাসে অবিস্মরনীয় এই দিনে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের প্রথম মিশন পতাকা উত্তোলন, ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ, বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিকক্ষে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং অলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সকালে উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হয়। পতাকা উত্তোলন করেন উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান। অতঃপর বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমীতে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে সংযুক্ত হয় মিশনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, যে ওয়েবিনারের শুরুতে কলকাতা মিশন কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ওপর নির্মিত মিউজিক ভিডিও প্রদর্শিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর ছাত্র জীবনের স্মৃতি-বিজড়িত ইসলামিয়া কলেজ (বর্তমানে মৌলানা আজাদ কলেজ)-এর বেকার হোস্টেলে (কক্ষ নং-২৪) তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। কলকাতায় নিযুক্ত উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান-এর নেতৃত্বে উপ-হাইকমিশনের রাজনৈতিক, ক্রীড়া ও শিক্ষা, বাণিজ্য, কনস্যুলার এবং প্রেস উইং এর দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এছাড়া উপ-হাইকমিশনের সকল কর্মচারি, কলকাতায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড-এর কর্মকর্তা/কর্মচারি, কলকাতায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ এবং স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসানের সভাপতিত্বে উপ-হাইকমিশনের ‘বাংলাদেশ গ্যালারি’-তে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণটি প্রদর্শিত হয়। এরপর প্রথম সচিব (প্রেস) ড. মোঃ মোফাকখারুল ইকবাল মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাণী এবং প্রথম সচিব (রাজনৈতিক-১) শামীমা ইয়াসমীন স্মৃতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনান। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট জহর সরকার, প্রবীণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও লেখক সরদার আমজাদ আলী, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের কাউন্সেলর (কন্সুলার) মোঃ বশির উদ্দিন এবং কাউন্সেলর (শিক্ষা ও ক্রীড়া) রিয়াজুল ইসলাম।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান বলেন, ‘৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের চিরন্তণ প্রেরণার উৎস। এটি একটি অনন্য রণকৌশলের দলিল। এ ভাষণ যুগে যুগে বিশ্বের সকল অবহেলিত, বঞ্চিত, নিপীড়িত ও স্বাধীনতাকামী জাতি-গোষ্ঠীকে অনুপ্রেরণা যোগাতে থাকবে অনন্তকাল ধরে। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণ তাই সকল যুগেই প্রাসঙ্গিক ও সমকালীন।’
সরদার আমজাদ আলী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘যাঁর নাম শুনলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে তিনি হলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা যিনি বাঙালি জাতিকে বাঁচার পথ দেখিয়েছিলেন। বিশ্বে আজ বাঙালিরা যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে-তা বঙ্গবন্ধুরই অবদান’। জনাব খান বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে যে অসাধারন বক্তব্য দিয়েছিলেন তা ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ জয়ের কৌশল’।
জহর সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের বক্তব্য হাজার বছর পরেও অক্ষয় হয়ে থাকবে কারণ সেদিনের বক্তব্যে একটি জাতি মুক্তির দিশা পেয়েছিল’। জনাব সরকার বলেন, ‘ বঙ্গবন্ধুর সেই বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গেও বেশ আলোড়ন তুলেছিল, যা এখনও আমাদের স্মৃতিতে রয়েছে’।
পরিশেষে সৌমিত্র মিত্র ও স্বপ্না দে কবিতা আবৃত্তি করেন যা দর্শক শ্রোতাদের মুগ্ধ করে এবং বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন, কলকাতা কর্তৃক নির্মিত ‘বজ্রকন্ঠের আহবান’ শীর্ষক মিউজিক ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেন, উপ-হাইকমিশনের মিনিস্টার (রাজনৈতিক) ও দূতালয় প্রধান বি এম জামাল হোসেন।
খুলনা গেজেট/এনএম