জ্বর, সর্দি, কাশি, শরীর ব্যাথাসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে রাস্তায় বসে কাতরাচ্ছিলেন ৭০ বছরের বৃদ্ধ পায়ে ঠেলা ভ্যান চালক গজেন দাশ। বাড়ির পাশেই ছেলেসহ স্বজনদের বসবাস হলেও খোঁজ নেয়নি কেউ। খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন পৌর মেয়র। পরে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসলে তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে। সেখানেই গত ৫ জুলাই থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। আর তার চিকিৎসার ব্যয়ভারও বহন করছিলেন পৌর মেয়র নিজেই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও তার খোঁজ রাখেনি স্বজনরা। অবশেষে মঙ্গলবার রাত দশটার দিকে হাসপাতালের করোনা ইউনিটেই মারা যান অসহায় গজেন দাশ। তিনি ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু শহরের পার্বতিপুর এলাকার মৃত-ফনি দাশের ছেলে।
এদিকে অসহায় এই বৃদ্ধের মৃত্যুর পরও তার লাশ নিতে এগিয়ে আসেনি পরিবার কিংবা স্বজনরা। এ নিয়ে স্বজনদের প্রতি ধিক্কার আর ঘৃণার ঝড় বইছে শহর জুড়ে। পরে রাত একটার দিকে ইউএনও, পৌর মেয়র আর ওসির তৎপরতায় ইসলামী ফাউন্ডেশনের তত্বাবধানে শহরের মহা শ্বশ্মানে তার সৎকার করা হয়।
ফজলুর রহমানসহ কয়েকজন ভ্যান-রিকশা চালক জানান, নিহতের এক ছেলের থানার পাশে লন্ড্রির দোকান আছে। সে বেশ স্বাবলম্বী। তবুও কখনও বাবার খোঁজ রাখেনি। তাই শারীরিক নানা সমস্যা নিয়েও দু‘বেলা দুমুঠো অন্যের জোগাড় করতে পায়েঠেলা ভ্যান নিয়েই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেন। কিন্তু আধুনিকতার এই যুগে ইঞ্জিনচালিত রিকশা-ভ্যানের পরিবর্তে তার পায়েঠেলা ভ্যানে উঠতো না যাত্রীরা। ফলে খুব মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খুব কষ্টেই কেটেছে গজেন দাশের জীবন।
হরিণাকুন্ডু পৌরসভার মেয়র ফারুক হোসেন বলেন, তিনি মাঝে মাঝেই পায়ে ভ্যান ঠেলে আমার কাছে আসতো। তাকে বিভিন্ন সময় সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি। তিনি খুব অসহায় জীবন-যাপন করতেন। তাকে সম্প্রতি বয়স্ক ভাতার আওতায়ও আনা হয়েছিল।
এদিকে গজেন দাশ ছাড়াও বুধবার হাবিবুর রহমান (২২) নামে করোনায় আরও এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সকাল সাতটার দিকে রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার হরিশপুর গ্রামের শিক্ষক দম্পত্তি আব্দুর রহিম মমতাজ খাতুনের ছেলে। এ নিয়ে ২৪ ঘন্টায় উপজেলায় করোনায় মারা গেলেন ২ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৬ জন। আর ২৪ ঘন্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ২৯ জন।
খুলনা গেজেট/এনএম