খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

করোনা যেমন শক্তিশালী হয়েছে, আমরা হয়েছি সহনশীল

ডা. শেখ সাদিয়া মনোয়ারা ঊষা

গত বছর এপ্রিলে নূর নগর বয়রায় প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে খুলনায় করোনা মহামারীর আগমন।

আজ ১৫ মাসে সে পা দিয়েছে।

প্রথম দিনগুলোতে রোগীর নাম মুখস্থ থাকতো।
ফোন দিয়ে রোজ খোঁজ নিতাম।
প্রায় ২৩ লাখ মানুষের শহর খুলনায় এই মুহূর্তে অবস্থান করছে ৩০০০ এর অধিক পজেটিভ রোগী।

এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের জীবনে এসেছে
করোনার ১ম ঢেউ, ২য় ঢেউ..
কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন…
অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনিকা, সাইনোফার্ম ভ্যাকসিন…
অক্সিজেন প্লান্ট,ব্যাংক,ট্যাঙ্ক, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা..
আরটি পিসিআর মেশিন,রাপিড আন্টিজেন টেস্ট..

সীমিত থেকে কঠোর লকডাউন চলেছে বহুবার ।

১টি মৃত্যুতে যেখানে সারা শহরে সাড়া পড়ে যেত, সেখানে এখন ৮/৯টি মৃত্যুর খবর দিতে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়া আর কিছুই ফেলি না।

এই পর্যন্ত এই মাসে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৪ জন!! যা অতীতের যে কোনো মাসের রেকর্ডকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে!

করোনা যেমন শক্তিশালী হয়েছে, আমরা হয়েছি সহনশীল।

ভ্যাকসিন আসলে আমরা দেবো কি দেবোনা এই নিয়ে চর্চা করি, আবার ভ্যাকসিন শেষ হয়ে গেলে ,কেন শেষ হলো এই নিয়ে কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করতে থাকি!

কঠোর লকডাউনে আমরা বড় রাস্তা গুলো ফাঁকা রেখে পাড়ার ছোট ছোট রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেমন লকডাউন হচ্ছে ? ৯-৫টা সবকিছু খোলা কেন?করোনাকি রাতে থাকে না? ইত্যাদি গল্পে চায়ের কাপে ঝড় তুলি।

ডেডিকেটেড হাসপাতালের রেড জোনে রোগীর সাথের শুশ্রূষাকারী হিসেবে যাই। একটু পরেই সামনের দোকান থেকে ওষুধ কিনে নিয়ে আবার রেড জোনে ঢুকি।

হাসপাতালে সিট নেই । বিভিন্ন উপায়ে বাসায় চিকিৎসা চালাই। তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমাদের পছন্দ না। ফার্মেসির দোকানদারের অকারনে দেওয়া নামিদামি অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন হাসিমুখে কিনতে পারি!!

৩টি ঈদ চলে গেছে। আমরা গেরিলা ট্রেনিং করে বাড়ি ফিরেছি।সামনে আরেকটি ইদ আসছে! এক একটি ইদ আমাদের এক একটি ঢেউ উপহার দিয়ে যায়।

ওহ, কিছু বিশ্বাস!!
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে করোনা থাকে না!!
গ্রামে করোনা হয় না!
শিশুর করোনা হয় না!

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বিনোদন বন্ধ।

দিন দিন চোখের সামনে পরিচিত শহরটা বদলে যাচ্ছে।

কোথায় সেই সাতরাস্তার মোড়, শিববাড়ির মোড়ের কোলাহল। সন্ধ্যায় চেম্বার থেকে ফেরার পথে রয়েলের মোড় টা কেমন ভূতুড়ে মনে হলো। রয়েলের মোড়ের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মূর্তিটি যেন দাঁত খিঁচিয়ে বলছে ,
‘বাড়ি যা ।এখন এ রাজপথে কেবল আমার রাজত্ব।’

প্রতিদিন ভাবি …
কালকে সকালে পরিসংখ্যানটা একটু কমবে..
আবার পজিটিভ সংখ্যা শূন্যতে নেমে আসবে..

মৃত্যুর রিপোর্ট বার বার চোখ বুলাই।
একটি মৃত্যু ও বেশি হয়ে যাচ্ছে না তো !
জনমনে আতঙ্ক ছড়াবে না তো!

যার হারিয়েছে সে জানে করোনায় স্বজন হারানোর ব্যথা। যার শ্বাসকষ্ট হয়েছে সে জানে শ্বাসকষ্ট কাকে বলে!

একটি মৃত্যুও কাম্য নয়।
আর এমন পৃথিবীও কাম্য নয় ।
যেখানে বলতে হয় এসেছে নতুন ভেরিয়েন্ট
তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান!!!
আসুন ,আরেক বার দূরত্ব, হাত ধোয়া, মাস্ক পরিধানকে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে বলি..

“এ পৃথিবীকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি..
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।” তথ্য সূত্রঃ লেখকের ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত।

(লেখকঃ মেডিকেল অফিসার রোগ নিয়ন্ত্রণ, সিভিল সার্জন অফিস, খুলনা।)




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!