করোনা মহামারির শত প্রতিকূলতার মাঝেও বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই হাতে পেয়েছে যশোরের শিক্ষার্থীরা। এ বছর বই উৎসব না হলেও বইয়ের ঘ্রাণ নিতে পারছে ছাত্র-ছাত্রীরা। যশোরে ১ জানুয়ারি থেকে ৬ দিনব্যাপী বিতরণ করা হবে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির বই। এছাড়া প্রথম দিনেই সব ক্লাসের বই বিতরণ করা হবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে।
চলতি বছরে জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে ৫৪ লাখ নতুন বইয়ের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ১৪ লাখ ১২ হাজার ৭৩৩ ও মাধ্যমিকে ২৭ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৬ পিস। বাকি বই মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এ চাহিদার বিপরীতে যশোরে ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে ৪০ লক্ষাধিক নতুন বই।
সূত্র জানায়, অনলাইনে দেশব্যাপী বই বিতরণের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১ জানুয়ারি থেকে দেশের প্রতিটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে নতুন বই। এ বছর বই উৎসব না হলেও দেশের সকল স্কুলে সকাল ৯টা থেকে বিতরণ হয়েছে বই। যশোরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও এর বাইরে নয়। জেলার সকল স্কুলে একযোগে বিতরণ করা হয়েছে সব ক্লাসের নতুন বই। তবে করোনা দুর্যোগে এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে বই বিতরণ করা হয়েছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে একদিনেই সব ক্লাসের বই বিতরণ করা হচ্ছে না। একেকদিন একেক ক্লাসের বই বিতরণ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনেই বই বিতরণের দিনক্ষণ নির্ধারণ করেছেন। ইতিমধ্যে যশোর জিলাস্কুল ও সরকারি বালিকা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বই বিতরণের রুটিন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোবাইলে ম্যাসেজের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী সরকারি এ দুটি বিদ্যালয় থেকে নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে।
যশোর জিলাস্কুলের রুটিন অনুযায়ী ১ জানুয়ারি চতুর্থ শ্রেণির বই, ২ জানুয়ারি পঞ্চম শ্রেণির বই, ৩ জানুয়ারি ষষ্ঠ শ্রেণির, ৪ জানুয়ারি সপ্তম শ্রেণির, ৫ জানুয়ারি অষ্টম শ্রেণির, ৬ জানুয়ারি নবম শ্রেণির বই বিতরণ করা হবে। শুক্রবার থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর অনুযায়ী ২০২১ শিক্ষাবর্ষের বই বিতরণ করা হবে।
যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের রুটিন অনুযায়ী ১ জানুয়ারি ষষ্ঠ শ্রেণির বই, ২ জানুয়ারি নবম শ্রেণির, ৩ জানুয়ারি সপ্তম শ্রেণির, ৪ জানুয়ারি অষ্টম শ্রেণির, ৫ জানুয়ারি পঞ্চম শ্রেণির ও ৬ জানুয়ারি চতুর্থ শ্রেণির বই বিতরণ করা হবে। সকাল ৯টা থেকে এ বই বিতরণ করা হবে। করোনা পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমাতে ও নিরাপদ পরিবেশে বই বিতরণের লক্ষ্যে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে শিক্ষকরা জানিয়েছে।
এদিকে যশোরের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ১ জানুয়ারি সব ক্লাসের বই বিতরণ করা হবে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে পর্যায়ক্রমে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবকের হাতে বই তুলে দেয়া হচ্ছে।
যশোর সদর উপজেলার সাড়াপোল রূপদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাকির হোসেন রিপন জানান, তারা শুক্রবার সকাল থেকেই বই বিতরণ করেছেন। তবে শিক্ষার্থীদের হাতে নয়, অভিভাবকদের হাতেই বই বিতরণ করেছেন। এদিন কেউ বই নিতে না পারলে পরবর্তীতে স্কুল থেকে নিতে পারবেন।
বিষয়টি নিয়ে যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যলয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লায়লা শিরিন সুলতানা বলেন, শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হয়েছে। স্কুলে আগত শিক্ষার্থীদের প্রথমে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোঁয়ানো হয়। পরে ২০ জন করে শিক্ষার্থী ক্লাস রুমে নিয়ে তাদের হাতে বই প্রদান করা হয়েছে। একইভাবে আগামী ৫দিন বই বিতরণ করা হবে। এসময়ে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের পরে ক্লাস টিচারের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করতে হবে।
উল্লেখ্য, যশোর জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট বইয়ের চাহিদা রয়েছে ৫৪ লাখ ৫৫ হাজার ২৪১ পিস। এর মধ্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও ভোকেশনাল মিলে মোট ৪০ লক্ষাধিক বই যশোরে এসেছে। যা স্কুল পর্যায়ে বিতরণ চলছে।
খুলনা গেজেট/এনএম