বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) অভিযোগ, বর্তমানে ডিম-মুরগির বাজারে অস্থিরতার মূল হোতা বাজারের করপোরেট কোম্পানি। এসব কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য এবং সিন্ডিকেটের কারণে বেড়ে গেছে ডিম-মুরগির দাম। বুধবার (২৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে বিপিএ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীরা।
বিপিএর সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, করপোরেট কোম্পানির আধিপত্যে বিপদের মুখে আছে প্রান্তিক খামারিরা। বাজারে টিকতে না পেরে অনেকে দেউলিয়া হয়ে গেছে, অনেকে আবার লোকসান দিয়ে হলেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখছেন।
তিনি আরও বলেন, বড় বড় করপোরেট কোম্পানি নিজেদের খামারি বলে পরিচয় দেয়, ফিড বা মুরগির বাচ্চা নিয়ে অ্যাসোসিয়েশন করে বলে, এগুলো খামারিদের সংগঠন। কিন্তু আদতে এখান থেকে খামারিরা কোনো লাভ পান না। এসব অ্যাসোসিয়েশনে নিজেদের মতো দামদস্তুর ঠিক করে কোম্পানিগুলো লাভ তুলে নেয় ঠিকই, কিন্তু বিপদে পড়েন প্রান্তিক খামারিরা।
এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান বিপিএ সভাপতি। তিনি বলেন, বড় বড় কোম্পানি প্রতি বস্তা মুরগির খাবার কেনে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। সেখানে প্রান্তিক খামারিদের খাবার কিনতে হয় ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। একেক বস্তায় যদি খাবারের দামের পার্থক্য হয় ১ হাজার টাকা, তাহলে উৎপাদন খরচের পার্থক্য কত, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
মুরগির দাম নিয়ে বিপিএ জানায়, যেখানে করপোরেট কোম্পানিগুলো প্রতিকেজি মুরগি উৎপাদন করে ১২৯ টাকায়, সেখানে খামারিদের উৎপাদন খরচের পর দাম দাঁড়ায় ১৬৭ টাকা। বাজারে এমন অসম প্রতিযোগিতা চলার কারণে প্রান্তিক খামারিদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে উঠছে।
ডিম-মুরগি বিক্রয়ের সরবরাহ ব্যবস্থা | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|
সাপ্লাই চেইন হিসাব | ডিম | ব্রয়লার | সোনালি | ডিম লস | ব্রয়লার লস | সোনালি লস |
উৎপাদন | ১১ টাকা | ১৯০ টাকা | ২৯০ টাকা | ক্যারিং | ক্যারিং | ক্যারিং |
স্থানীয় আড়তদার | ১৫ পয়সা | ৩ টাকা | ৫ টাকা | ভাঙা | ওজন লস | ওজন লস |
শহরের আড়তদার | ৩০ পয়সা | ২০ টাকা | ৩০ টাকা | ২০ পয়সা | – | – |
ভ্যানগাড়ি পাইকারি বিক্রয় | ৩০ পয়সা | নাই | নাই | ১০ পয়সা | – | – |
খুচরা বিক্রেতা | ৫০ পয়সা | ১৫ টাকা | ২৫ টাকা | ১০ পয়সা | ৫ টাকা | ১০ টাকা |
ভোক্তা পর্যায়ে যৌক্তিক দাম | ১২.২৫ টাকা | ২২৮ টাকা | ৩৫০ টাকা | ৪০ পয়সা | ২০ টাকা | ৩৫ টাকা |
সংবাদ সম্মেলনে ডিম ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা জানান, সরকার ডিমের দাম ঠিক করেছে ১২ টাকা। এখানে সরবরাহ ব্যবস্থার বিষয়টি একেবারে মানা হয়নি। প্রতিটি ডিম উৎপাদনেই খরচ হয় ১০ টাকা ৮০ পয়সা। এরপর স্থানীয় আড়তদার, শহরের আড়তদার, ভ্যানগাড়ির পাইকারি বিক্রয় এবং অবশেষে খুচরা বিক্রেতা হয়ে ভোক্তার হাতে ডিম যায়। এ ক্ষেত্রে ১২ টাকায় ডিম বিক্রি অসম্ভব। কম করে হলেও ডিমের দাম ১২ টাকা ২৫ পয়সা নির্ধারণ করা উচিত। এতে নূন্যতম লাভ নিশ্চিত হবে।
ডিমের দাম কমানোর উপায় কী? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সুমন হাওলাদার বলেন, সরকার চাইলেই ডিমের উৎপাদন খরচ ৮ টাকায় নামিয়ে আনতে পারে। যেসব করপোরেট প্রতিষ্ঠান বাজারে মুরগির খাবার বিক্রি করে, তাদের একাধিপত্য এবং সিন্ডিকেট ভেঙে দিলে ডিমের উৎপাদন খরচ কমে আসবে। শুধু ডিম নয়, ব্রয়লার এবং সোনালি মুরগির দামও কমে আসবে বলে জানান তিনি।
খুলনা গেজেট/এমএম