আজ ২৫ বৈশাখ। বাংলা সাহিত্যের অনন্য ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬১তম জন্মবার্ষিকী। ১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কালজয়ী এই কবি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বসাহিত্যের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাদের একজন। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে যার অবদান অসামান্য। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য পায় নতুন রূপ। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মননশীলতা দিয়ে বিশ্ব অঙ্গনে বিরল সম্মান আর্জন করেন তিনি।
বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা।
১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তার পত্নীবিয়োগ হয়।
১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।
১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তার মৃত্যু হয়।
রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা। রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাও কাব্যিক।
ভারতের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তার রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন। সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন।
পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন- রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন।
রবীন্দ্রনাথের গান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তার রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ ও ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ গানদুটি যথাক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত। এছাড়া শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতের কথাও তার গানের অনুবাদ।
খুলনার কর্মসূচি
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর ১৬১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ২৫ থেকে ২৭ বৈশাখ-১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ৮-১০ মে-২০২২ খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্সে খুলনা জেলা প্রশাসন তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান ও লোকজমেলার আয়োজন করেছে।
২৫ বৈশাখ, ৮ মে বিকাল চারটায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান ও সাড়ে চারটায় আলোচনা সভা, ৯ মে বিকাল সাড়ে চারটায় আলোচনা সভা এবং ১০ মে বিকাল সাড়ে চারটায় আলোচনা সভা ও সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে।
এছাড়া রূপসা উপজেলার পিঠাভোগে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। ৮ মে সকাল ১০টায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান, সাড়ে ১০টায় শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বেলা আড়াইটায় রবীন্দ্র সংগীত প্রতিযোগিতা, বিকাল চারটায় আলোচনা সভা এবং সাড়ে পাঁচটায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
৯ মে বেলা আড়াইটায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, বিকাল চারটায় আলোচনা সভা ও সাড়ে পাঁচটায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
১০ মে বেলা আড়াইটায় রবীন্দ্র সংগীতের সাথে নৃত্য প্রতিযোগিতা, বিকাল চারটায় আলোচনা সভা ও সমাপনী অনুষ্ঠান এবং সাড়ে পাঁচটায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।