অবশেষে মুসলিম রেনেসাঁর কবি ফররুখ আহমদের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি অক্ষত রেখেই স্থাপন করা হচ্ছে নতুন রেললাইন। এ জন্য কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে নকশায়। কবির বাড়ির পাশ দিয়ে ফ্লাইওভার হয়ে যাবে রেললাইন। এই রেললাইনটি ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মধুমতী নদীর ওপর দিয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত যাবে। ২০২২ সালের নভেম্বরে নতুন এই রেললাইন নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ও কবির পরিবার সূত্রে জানা যায়, মুসলিম রেনেসাঁর কবি হিসেবে পরিচিতি কবি ফররুখ আহমদ। বিংশ শতাব্দীর এই কবি ছিলেন ইসলামি ভাবধারার বাহক। আজ তার ১০৩ তম জন্মদিন। কবি ফররুখ আহমদ ১৯১৮ সালের এই দিনে (১০ জুন) মাগুরা জেলার মাঝাইল গ্রামের পৈতৃক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ হাতেম আলী। মাতা বেগম রওশন আক্তার। গ্রামের পাঠশালায় শিক্ষাজীবনের হাতে খড়ি। কবির পৈতৃক বাড়িতে তার পূর্বপুরুষদের আদিবাস। কাঠ ও টিন দিয়ে নির্মিত সেই ঘরে কবির অনেক স্মৃতি। কবির স্মৃতি বিজড়িত বসতভিটা ও জন্ম নিয়েছিলেন যে ঘরে সেই ঘরের দরজায় পড়েছে লাল কালির একটি তীর চিহ্ন।
ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মধুমতী নদীর ওপর দিয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত যাবে নতুন এই রেললাইনটি। গত ২৭ মে রামনগর হরিপদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভার্চুয়ালি এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক হাজার ২০২ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের বিদ্যমান রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে মাগুরা জেলা। নকশা অনুযায়ী মাগুরা জেলার এই অংশে রেললাইন যাবে কবি ফররুখ আহমদের বসতভিটার ওপর দিয়ে।
এ জন্য গত ২৮ মে কবির এই জন্ম ভিটার তিন পাশে তিনটি লাল নিশান পুঁতে দেওয়া হয়েছে। চিহ্ন দেওয়া হয়েছে কবির বাবা খান বাহাদুর সৈয়দ হাতেম আলী এবং কবি মায়ের কবরের পাশেও। কবির স্মৃতি বিজড়িত সেই ঘরটির আশপাশে লাল দাগ দিয়ে গেছে রেলওয়ে লোকজন। বাড়ির ওপর দিয়ে যাবে রেললাইন।
এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যদের দাবি ছিল কবির বসতবাড়ি অক্ষত রেখে রেললাইন তৈরি করার। যাতে কবির শেষ স্মৃতি চিহ্নটুকু মাগুরা থেকে হারিয়ে না যায়। এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সেই ঘরটিসহ কবির স্মৃতি রক্ষার জন্য আবেদন করা হয়। সেই আবেদনে সাড়াও মিলেছে। পরিবর্তন আনা হয়েছে নকশায়। এতে অক্ষত থাকবে কবির স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি। বাড়ির একপাশ দিয়ে ফ্লাইওভারের মাধ্যমে যাবে রেললাইন। কবির বাড়ি অক্ষত রেখেই নতুন রেললাইন স্থাপন করা হবে জানিয়েছেন রেলওয়ে এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ।
মাগুরার জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কবি ফররুখ আহমদের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা প্রজেক্ট পরিবর্তনের জন্য একটি প্রোপোজাল মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। সেই অনুযায়ী পরিবর্তন আনা হয়েছে। কবির বাড়ির কিছুটা পাশ এবং ওপর দিয়ে রেললাইন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কবির বাড়ির কোনো কিছুই নষ্ট হবে না।
তিনি বলেন, মুসলিম নবজাগরণের কবি ফররুখ আহমদ। সুতারং কীভাবে তার বাড়ির ক্ষতি করে প্রজেক্টের ডিজাইন করা হয়। এটি সম্ভব নয়। কবির বাড়ির স্থাপনার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় ওই খানে রেললাইনের নকশা পরিবর্তন করেছে মন্ত্রণালয়।
মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আছাদুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকল্পের নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। কবির বাড়ির স্থাপনা অক্ষত রেখে রেললাইনটি বাড়ির এক কোণা দিয়ে ফ্লাইওভার হয়ে চলে যাবে।
তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে দেড় বছর। সেই অনুযায়ী ২০২২ সালের নভেম্বরে রেললাইন নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
খুলনা গেজেট/এমএম