কপোতাক্ষের ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে অস্তিত্ব সংকটে খুলনার পাইকগাছার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাও: আবুল কালাম আজাদ। এসময় তিনি উপজেলার কাশিমনগর বাজার, নবনির্মিত গ্রামীণ মার্কেটসহ তীরবর্তী জেলেপল্লীর বিস্তির্ণ এলাকা ঘুরে দেখেন। তিনি বুধবার (৯ অক্টোবর) সকাল ৯ টায় ভাঙ্গনকুলে পৌছালে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাকে স্বাগত জানান।
এসময় ভাঙ্গন প্রতিরোধে তিনি তাৎক্ষণিক সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে মুঠোফোনে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ জানান।
এ সময় তার সাথে অন্যদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পাইকগাছা উপজেলা শাখার সহ-সম্পাদক মাওলানা বুলবুল আহমাদ, কপিলমুনি শাখার আমীর মো. রবিউল ইসলাম, সহ-সম্পাদক মো. ওমর আলী, ওয়ার্ড সভাপতি মো. হাবিবউল্লাহ সরদার, ময়নুল আহম্মেদ, মো. ওবাইদুল্লাহ, মো. শামীম বিশ্বাস, মো. শহীদুল ইসলাম, মো. রফিকুল ইসলাম, দীপ্ত নিউজ ২৪.কম এর সম্পাদক শেখ দীন মাহমুদ, কপিলমুনি প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এইচ, এম শফিউল ইসলাম, সাংবাদিক শেখ নাদীর শাহ্সহ প্রমূখ।
প্রসঙ্গত, কপোতাক্ষের অব্যাহত ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে কয়েক শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী কাশিমনগর হাট-বাজার, বাজার জামে মসজিদ, নদী তীরের বাইপাস রাস্তা, সরকারের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নযন (সিআরএমআইডিপি) প্রকল্পের ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নব নির্মিত গ্রামীণ মার্কেটের বহতল ভবন, স্থানীয় জেলে পল্লীসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙ্গনের মুখে রীতিমত অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে জরুরী ভিত্তিতে পাউবোর বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সূত্র জানায়, এর আগে চরম দূর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে পাউবোর জরুরী ভিত্তিতে ১১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১২০ মিটারের জিও ব্যাগের বাঁধটি মাত্র ১৫ দিনেই ধ্বসে পড়ে। ফলে ভাঙ্গন প্রসারত বৃদ্ধি পেয়ে সংকট আরো বেগবান হয়েছে। ইতোমধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়নের একাধিক পিলার নদীর মধ্যে পড়ে যাওয়ায় তা উঠিয়ে নতুন করে মার্কেট লাগোয়া জমিতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ব্রিটিশ শাসনামলেরও আগে প্রতিষ্ঠিত পদ্মার এপারের সবচেয়ে বড় গরু-ছাগলের হাট-বাজার কাশিমনগর। প্রাচীণ জনপদের এ হাট-বাজারকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ শাসনামলে এখানে গড়ে ওঠে গ্রামীণ কাাঁচা বাজার, মসজিদ, কোম্পানি ঘর, জনবসতির পাশাপাশি নানা স্থাপনা। সর্বশেষ সরকার এ জনপদের গুরুত্ব যাচাই করে এ বাজারেই বরাদ্দ দেয় ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যায়ে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন (সি আর এম আই ডিপি) প্রকল্পের ৪ তলা ফাউন্ডেশনের দ্বিতল বিশিষ্ঠ গ্রামীণ মার্কেট। ইতোমধ্যে ভবনটি নির্মান সম্পন্ন হলেও তা ব্যবসায়ীদের মধ্যে বরাদ্দ ও চালু করতে পারেনি। এরই মধ্যে ভয়াবহ ভাঙ্গনের মুখে চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে সরকারের মেগা প্রকল্পের এ গ্রামীণ মার্কেটসহ কাশিমনগর বাজার, মসজিদ, জেলে পল্লীসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
পাউবো সূত্র জানায়, এর আগে গত বছর গ্রামীণ মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় ভাঙ্গনের মুখে বাপাউবোর জরুরী ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১১ লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যায়ে নির্মিত বাঁধটি মাত্র ১৫ দিনে ধ্বসে পড়ে। এজন্য অবশ্য পাউবোর পরিকল্পনাহীনতা, চরম দূর্নীতি ও অনিয়মকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, বাঁধটি মাত্র ক’দিনের ব্যাবধানেই পানি ও উপরের মাটির চাপে ধ্বসে পড়ে। এসময় পাইলিংয়ের টানা (সরু তার) দিয়ে বাঁধা খুঁটাগুলি উপড়ে মাটিসহ জিও ব্যাগ নিয়ে পাইলিংটি নদীর পানিতে হেলে পড়ে। এছাড়া গবাদি পশুর হাটের ইজারা নিয়ে ইজারাদার সেখানে গর্ত করে নদীতে কার্গো ঢুকিয়ে বালু উত্তোলন ব্যবসার জন্য ভাড়া প্রদান ও প্রতিদিন ব্যবসায়ীরা বাঁশ উঠা-নামা করানোয় সেসব এলাকায় দ্রুত ভাঙ্গন পরিধি বেড়ে গেছে। বর্তমানে নদীতে জোয়ারের পানির প্রবল চাপে যেকোন সময় নতুন ভবন (মার্কেট), মসজিদ, বাজার চাঁদনীসহ বিস্তির্ণ এলাকা ধ্বসে নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে বলে চরমভাবে আশংকা করা হচ্ছে।
এব্যাপারে বাপাউবোর পাইকগাছা উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মোতাবেল হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন ভাঙ্গন এলাকায় তাদের কোন বরাদ্দ নেই। পারলে উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের নিকট আবেদনের জন্যও পরামর্শ দেন তিনি।
খুলনা গেজেট/এএজে