খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

কচু চাষে ভাগ্য বদল নিউটন মন্ডলের

একরামুল হোসেন লিপু

পানি কচুর চাষ করে ভাগ্য বদল হয়েছে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর ইউনিয়নের ঘোনা মাদারডাঙ্গা গ্রামের নিউটন মন্ডলের। দূর হয়েছে তার দারিদ্রতা। স্ত্রী সন্তান নিয়ে ববসবাস করছেন সুখ, শান্তি আর স্বাচ্ছন্দ্যেের মধ্য দিয়ে। নিজের ইজ্জত বেড়েছে, বেড়েছে পরিচিতি। কোটি টাকার গাড়িতে চড়া , প্লেনে উঠার সৌভাগ্য হয়েছে। ব্যবহার করছেন লক্ষাধিক টাকা মূল্যের আইফোন মোবাইল। চলাফেরা করেন দামি মোটরসাইকেল নিয়ে।

তার চাষ করা পানি কচু “নিউটন কচু” নামে সারা দেশে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছে। নিউটনের চাষ করা একটি পরিপক্ক কচুর ওজন ৩৫ কেজি। বিক্রি করেন ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে। কচু বিক্রি থেকে বছরে তার আয় প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। নিউটন কচুর চারা এখন আমেরিকা, ফ্রান্স এবং ইটালীর মতো উন্নত দেশেও চাষ হচ্ছে ।

এছাড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের “কন্দাল ফসল উৎপাদন প্রকল্প’র মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলার ১৫২ টি উপজেলায় নিউটন কচুর চাষ শুরু হয়েছে। পানি কচু চাষের পাশাপাশি নিউটন পেঁপে, ড্রাগন ফলসহ অন্যান্য কিছু পণ্য উৎপাদন করে থাকেন। কচু চাষের পাশাপাশি নিউটন ড্রাগন ফল চাষ করেও বেশ সফলতা পেয়েছেন। ড্রাগন চাষ থেকে তার বছরে আয় প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। ড্রাগন ফল থেকে আয় বেশি হলেও নিউটন কচু চাষটাকেই প্রাধান্য দেন বেশি। ১৯ বছর যাবৎ তিনি এই পানি কচুর চাষ করছেন। কচু চাষে তার ভাগ্য বদলের পাশাপাশি নিউটন কচু নামে সারা দেশে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন।

নিউটন মন্ডল খুলনা গেজেটকে বলেন, ১৮ বছর আগে দৌলতপুর পপুলার জুট মিলে শ্রমিকের কাজ করতাম। পাটের ধূলোয় কাজ করতে করতে শ্বাসকষ্ট, কাশিসহ নানান রোগে আক্রান্ত হলাম। এমন অবস্থায় পাটের কাজ ছেড়ে বাড়ির দুই কাঠা জমিতে সর্বপ্রথম পানি কচুর চাষ শুরু করি। ২’শ কচুর চারা আনি রুপসা উপজেলার কালানগর গ্রাম থেকে। প্রথমবার ভালো লাভ পায়। এরপর আস্তে আস্তে কচু চাষের বাগান বাড়াতে থাকি। বর্তমানে ১০ থেকে ১২ বিঘা জমিতে কচুর চাষ করি। কচু চাষের পাশাপাশি ড্রাগন ফলের চাষ, পেঁপের চাষসহ কৃষিকাজ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করি।

তিনি বলেন, কচুর চাষের আগে জমিতে ধান লাগাতাম। জমির চারপাশে গাছপালা থাকায় ধান চিটে হয়ে যেতো। তখন আমার স্ত্রী বললো ধানের বদলে কচু লাগাই দেখো কি হয়? স্ত্রীর কথাই কচু লাগানো শুরু করি। কচু চাষ করে৷ আমার ভাগ্যটা ফিরে গেছে। বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে দুটো লবণ ভাত খাতি পারতিছি। এই কচুর জন্য আমি প্লেনে উঠতি পারিছি। ঢাকা উত্তরা ক্লাবে রইছি ওরা ১০ হাজার ৭০০ টাকা এক রাতি ভাড়া দিছে। ১ কোটি টাকা দামের গাড়িতে নিয়ে দুই দিন ঘুরোইছে। শুধুমাত্র কচুর জন্য। কচুর ঋণ আমি শোধ করতে পারবোনা। আগে আমার মেয়ের লেখাপড়ার খরচ দিতে পারতাম না। দুধ কিনতে পারতাম না। এখন আমার মেয়ে ঘুনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস টেনে পড়ে। কচুর চাষ করে আমি খুবই ভালো আছি। বউ ছেলেমেয়ে নিয়েও সুখে আছি।

নিউটন বলেন, এ বছর ১০/১২ বিঘা জমিতে প্রায় ৩৫/৩৬ হাজার কচুর চারা লাগাইছি। কচুর বয়স দুই মাস। ১০/১২ কেজি ওজন হয়ে গেছে। ৬ মাস বয়স হলে হারভেস্ট করবো। তখন একটা ও কচুর ওজন হবে ৩৫ কেজি। হাইট হবে ১০ ফুট। কচুর মাটির নিচের অংশ ৬/৭কেজি ওজন হবে। আমার এ কচু রান্না করলে চিনির মতো মিষ্টি লাগে। কচুর নিজের অংশ মান কচুর মত স্বাদ লাগে। ৩৫ কেজি ওজনের একটি কচু আমি ১০০ টাকা বিক্রি করি। বাগানের ছোট কচুগুলোও ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। জাত পানি কচু হলেও সারাদেশে এই কচুর নাম হয়ে গেছে নিউটাউন কচু। নিউটন কচু চিনির মত মিষ্টি, স্বাদ খুব ভালো। এ কারণে দিন দিন নিউটন কচুর চাহিদা বাড়তিছে। এ কচুর চারা, ফুল, লতি সবই বিক্রি করি। লতি এবং ফুলেরও খুব চাহিদা। ১ কেজি লতি বিক্রি করি ৩০/৩৫ টাকা, কচুর ফুল বিক্রি করি এক টাকা পিচ।

কচু চাষের পাশাপাশি নিউটন মন্ডল পেঁপে, মাছ এবং ড্রাগন ফলেরও চাষ করেন। এ প্রতিবেদককে তিনি জানান এ বছর ড্রাগন ফল থেকে তার আয় হবে ৩০ লক্ষ টাকা।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, আসলে নিউটন কচু নামে কোন জাত নেই। পানি কচুর সফল চাষী নিউটন মন্ডল স্থানীয় জাতের ভালো ভালো কচুর চারাগুলো সিলেকশনের মাধ্যমে সেগুলো চাষ করে ভালো ফল পেয়েছে। লাভবান হয়েছে। জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এভাবে আস্তে আস্তে নিউটনের নামে এ কচুর নাম হয়েছে নিউটন কচু।

তিনি বলেন,স্থানীয় এ জাতের কচুগুলোর পানি সহ্য ক্ষমতা খুব বেশি। এ জাতীয় কচু বেশি পানিতে পচন ধরে না, অল্প পানিতেও বেঁচে থাকে। এ কচুর বিশেষত্ব হলো কচুর সম্পূর্ণ অংশ খাওয়া যায়। লতি, ফুল, মাটির নীচের অংশ কোন কিছু বাদ যায় না। সবই খাওয়া যায়। এছাড়া স্থানীয় জাত হিসেবে এ কচুর লতি এবং মাটির নিচের অংশ খেতে খুব স্বাদ। গত ৪-৫ বছর ধরে খুলনা অঞ্চলসহ সারাদেশে নিউটন কচু নামে স্থানীয় জাতের এ পানি কচু বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ডুমুরিয়া উপজেলায় ১১০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের পানি কচুর চাষ হয়।

তিনি বলেন, নিউটনের স্ত্রী’র মাধ্যমে পানি কচুর ডগা দিয়ে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে আচার তৈরি করে খেয়েছি। স্বাদ ভালই। তিনি বলেন, আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে পানি কচুর ডগা দিয়ে আচার তৈরি করে বাজারজাতকরণের। কারণ কচুতে যে ভিটামিন, মিনারেল আর খনিজ পদার্থ রয়েছে এটা শরীরের জন্য উপকারী। পানি কচুর আরো একটা স্থানীয় জাত আমরা খুঁজে পেয়েছি। যেটা মৌলভী কচু নামে পরিচিত। আশা করি মৌলভী কচুও নিউটন কচুর মতো জনপ্রিয়তা পাবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!