কিছুতেই থামছে না মন্ত্রী-এমপির স্বজনের প্রার্থী হওয়া। আওয়ামী লীগের দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও সারাদেশে অন্তত ২৫ জন প্রার্থী হয়েছেন। বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সমন্বিত তালিকায় বলা হয়েছে, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় মোট ১ হাজার ৫৮৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান ৫৭০, ভাইস চেয়ারম্যান ৬১৮ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে জমা দিয়েছেন ৪০০ জন।
তৃতীয় ধাপের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই হবে ৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ মে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ ১৩ মে। ভোট হবে ২৯ মে।
চট্টগ্রাম বিভাগের ২৬ উপজেলায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ১০ মন্ত্রী-এমপির স্বজন। এর মধ্যে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভাগনে (আপন বোনের ছেলে) মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে চেয়ারম্যান পদে স্থানীয় সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলামের ভাতিজা আমিনুল ইসলাম তুষার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কুমিল্লার দেবিদ্বারে স্থানীয় এমপি আবুল কালাম আজাদের ভাই যুবলীগ নেতা মামুনুর রশিদ, মুরাদনগরে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সরকারের ছেলে ড. আহসানুল আলম কিশোর, তাঁর আপন ভাতিজার ছেলে (নাতি) আল আমিন সরকার ও ব্রাহ্মণপাড়ায় স্থানীয় এমপি এম এ জাহেরের ভাতিজা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবু তৈয়ব সরকার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
কক্সবাজারের রামুতে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের বড় ভাই সোহেল সরওয়ার কাজল। আর উখিয়ায় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন স্থানীয় এমপি শাহীন আক্তারের ভাই জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী। লক্ষ্মীপুর সদরে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহউদ্দিন টিপু। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের ফুফাতো শ্যালক।
সিলেট বিভাগের ১০ উপজেলার মধ্যে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদের ছোট ভাই ইমতিয়াজ আহমদ বুলবুল।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিনের মেয়ে সেলিমা বেগম সালমা ও বর্তমান সংসদ সদস্য (স্বতন্ত্র) আবদুল মালেক সরকারের জামাতা শাহ মো. আলমগীর হোসেন। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলায় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির স্থানীয় এমপি শরীফুল ইসলাম জিন্নাহর ছেলে জেলা যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক হোসাইন শরীফ সঞ্চয়, শ্যালক বর্তমান চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ রিজু ও শাশুড়ি ফাতেমা বেগম।
বরিশাল বিভাগের ১০ উপজেলায় স্থানীয় দুই এমপির ভাই ও আরেক এমপির আত্মীয় প্রার্থী হয়েছেন। তারা হলেন পিরোজপুর-২ আসনের এমপি মহিউদ্দিন মহারাজের ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম, পিরোজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শামীম শাহ নেওয়াজের ভাই বর্তমান চেয়ারম্যান রিয়াজউদ্দিন আহমেদ এবং বরগুনার পাথরঘাটায় প্রার্থী হয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরের চাচাতো ভাশুরের স্ত্রী নুর আফরোজ হেপি।
নওগাঁর রানীনগর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন হেলালের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাহিদ সরদার। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও স্থানীয় এমপি মহিউদ্দিন আহমেদের ছেলে আনিসুর রহমান রিয়াদ এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে তাঁর জামাতা মামুন হোসেন।
কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের ছোট বোন এবং স্থানীয় এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের ফুপু আছিয়া আলম। গত পরিষদের এ চেয়ারম্যান মাউশি চেয়ারম্যান নেহাল আহমেদের মা।
মানিকগঞ্জ সদরে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপির ফুপাতো ভাই ইসরাফিল হোসেন। তিনি উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লার স্ত্রী ফেরদৌসী ইসলাম চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। তবে খুলনা ও রংপুর বিভাগে মন্ত্রী-এমপির কোনো স্বজন প্রার্থী হননি।
খুলনা গেজেট/এইচ