এসএসসি ফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে গত ২৮ জুলাই নিজ ফেইসবুক আইডিতে আপত্তিকর স্টাটাস দেওয়ার অভিযোগে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার রাজাপুর ইউনাইটেড বিল্ব রাণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুব্রত কুমার দাশকে কারণ দর্শাণোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ তরিকুল ইসলাম (মাধ্যমিক-২) গত ১০ আগষ্ট স্বাক্ষরিত এক চিঠি সুব্রত কুমার দাশ এবং ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিমাই কৃষ্ণ মন্ডলসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার রাজাপুর ইউনাইটেড বিল্ব রাণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক, ছাত্র ও একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে,গত ২৮ জুলাই শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার পর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়। তাদের বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুব্রত কুমার দাশ তার নিজস্ব ফেইসবুক আউডিতে স্টাটাস দেন যে“ এত পাস কিভাবে সম্ভব”। এসএসসি পরীক্ষার ফল নিয়ে ফেইসবুকে স্টাটাস দেওয়ায় এলাকায় তোলপাড়া শুরু হয়। এছাড়া ওই শিক্ষক মোবাইল ফোনে শিক্ষা মন্ত্রীকে সমালোচনা করে বলেন, আমাদের অযোগ্য বলেছেন, যে কারণে আমি ইচ্ছা করে এ পোষ্ট দিয়েছি। এর কয়েদিন পর তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুল শিক্ষক সুব্রত কুমার দাশকে কারণ দর্শাণোর নোটিশ দেন।
স্থানীয়রা জানান, সহকারি শিক্ষক সুব্রত কুমার দাশ এ বিদ্যালয়ে জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকাকালিন ২০১৬ ালের ১৭ এপ্রিল আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়ম বহির্ভুতভাবে যোগদান করেন। হাজিরা খাতা অনুযায়ি ওই বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত তিনি ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ২০১৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে ওই বছরের ২২ আগষ্ট পর্যন্ত তিনি এক মাসের চিকিৎসা ছুটি নেন। এ ছাড়া ২৩ আগষ্ট থেকে পরবর্তী বছরের ১১ এপ্রিল তিনি অনুমতিবিহিীন ছুটি ভোগ করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের ছয় থেকে সাত মাস পর তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে ইস্তফা দেন। একইসাথে দুটি বিদ্যালয়ে কাজ করার অভিযোগে রাজাপুর ইউনাইটেড বিল্ব রাণী মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য নিমাই কুমার সানা তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শাণোর নোটিশ দিলে সুব্রত কুমার দাশ লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। পরে কর্তৃপক্ষ তাকে মাফ করে দেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্র বলেন, শিক্ষক সুব্রত কুমার দাশ সম্প্রতি একটি চেয়ারে ছাগল রেখে পাশে প্রধান শিক্ষকের ছবিসহ ফেইসবুকে পোষ্ট দিয়ে বিদ্যালয়ের ভাবমুর্তি নষ্ট করেছেন। এ ছাড়া ওই স্যারের একজন শুভাকাঙ্খী শিক্ষক বিদ্যালয়ের রেজুলেশন খাতা নিয়ে আপত্তিকর পোষ্ট দিলে শিক্ষক সুব্রত কুমার দাশ তাতে চরম আপত্তিকর মন্তব্য করে পোষ্ট দিয়েছেন। এসব ঘটনায় সুব্রত কুমার দাশসহ তার ঘনিষ্ট কয়েকজন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে চরম স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
আশাশুনির প্রতাপনগর পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, সুব্রত কুমার দাশ ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল তার বিদ্যালয়ে যোগদান করে অনিয়মিতভাবে এসে হাজিরা খাতায় সাক্ষর করতেন। একপর্যায়ে ছয় মাস পর তিনি ইস্তফা দেন। এতে তিনি একজন শিক্ষক ছাড়াই পড়াশুনা চালাতে হিমসিম খেয়েছেন।
এ ব্যাপারে রাজাপুর ইউনাইটেড বিল্ব রাণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুব্রত কুমার দাশ জানান, এসএসসি পরীক্ষার ফল নিয়ে তিনি তার ফেইসবুকে যে স্টাটাস দেন কয়েক ঘণ্টা পর তা তিনি রিমুভ করে দেন। এরপরও তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাকে কারণ দর্শাণোর নোটিশ দেওয়ায় রোববার তিনি জবাব দিয়েছেন। তবে তিনি মাউশি থেকে কোন কারণ দর্শাণোর নোটিশ পাননি দাবি করে বলেন, পেলে তিনি যথাসময়ে জবাব দেবেন। একইসাথে দুটি বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় সই থাকলেও প্রতাপনগর পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদালয়ে কয়েকদিন গিয়েছিলেন এবং কয়েক মাস পরে ওই বিদ্যালয়ে ইস্তফা দিয়েছিলেন এই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের অনুরোধে। তবে তাকে নিয়ে চক্রান্ত চলছে দাবি করে তিনি বলেন, তিনি একটি স্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি করেন। তবে চেয়ারে ছাগল রেখে প্রধান শিক্ষকের ছবিসহ ফেইসবুকে স্টাটাস দেওয়া নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।
সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অজিত কুমার সরকার জানান, এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে তালার রাজাপুর ইউনাইটেড বিল্ব রাণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুব্রত কুমার দাশ ফেইসবুকে আপত্তিকর পোষ্ট দেওয়ায় তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাউশি থেকে তাকে পৃথক কারণ দর্শাণোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সন্তোষজনক জবাব না পেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদুল