পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম বলেন, ‘সামরিক অভিযান চালালে জাহাজের নাবিক, ক্রু ও অন্যদের প্রাণনাশের ঝুঁকি থাকে। যেহেতু জাহাজ মালিক মুক্তিপণ দিতে রাজি হয়েছেন, তাই এ ধরনের পদক্ষেপের কোনো প্রয়োজন নেই।’
বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সোমালি জলদস্যুদের হাতে অপহৃত হওয়ার পরপরই ইউরোপীয় মেরিটাইম ফোর্সেসের একটি জাহাজ এবং ইন্ডিয়ানা নৌবাহিনীর একটি যুদ্ধজাহাজ তাৎক্ষণিকভাবে নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর অনুমতি চেয়েছিল।
তবে জাহাজের মালিক এসআর শিপিং এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নাবিকদের প্রাণহানির ঝুঁকি এড়াতে সশস্ত্র অভিযানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম বলেন, ‘সামরিক অভিযান চালালে জাহাজের নাবিক, ক্রু ও অন্যদের প্রাণনাশের ঝুঁকি থাকে। যেহেতু জাহাজ মালিক মুক্তিপণ দিতে রাজি হয়েছেন, তাই এ ধরনের পদক্ষেপের কোনো প্রয়োজন নেই।’
এসআর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম এমভি আবদুল্লাহে সামরিক অভিযানের অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নাবিকদের নিরাপত্তা আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার। আমরা আমাদের নাবিকদের জীবনের ঝুঁকি নিতে পারিনা, তাই আমরা উদ্ধার অভিযানের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি।’
জলদস্যুরা এখনও কোনো মুক্তিপণ দাবি না করলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চলমান প্রচেষ্টার কথাও উল্লেখ করেন করিম।
তিনি আরও জানান, রবিবার জাহাজের ক্যাপ্টেন স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে তাদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
মেহেরুল বলেন, ‘তিনি আমাদের জানিয়েছেন যে নাবিকেরা সবাই ভালো আছেন এবং জলদস্যুরা জিম্মিদের সঙ্গে ভালো আচরণ করছে।’
সোমালি জলদস্যুরা গত ১১ মার্চ উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে ছিনতাই করে। এরপর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যমতে, ‘জাহাজটি বর্তমানে গোদোব জিরান উপকূল থেকে প্রায় ৪ মাইল দূরে নোঙর করেছে।’
গোদোব জিরান সোমালিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় নুগাল প্রদেশের একটি শহর।
গত দুদিন ধরে জাহাজের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে এবং জাহাজের মালিক বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জলদস্যুরা কোনো যোগাযোগও করেনি।
নৌ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলদস্যুরা বর্তমানে অপেক্ষার খেলা খেলছে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। প্রাথমিকভাবে তারা বেশ কয়েক দিন জাহাজটিকে সুরক্ষিতভাবে নোঙর করে রাখা যায়, এমন একটি জায়গা খুঁজছিল। মনমতো জায়গা খুঁজে পাওয়ার পর এখন তারা সেখানেই স্থির হয়ে আছে। এখন তারা জাহাজের দাম এবং তাদের চাহিদা পূরণে মালিকের সক্ষমতা মূল্যায়ন করছে।
এছাড়া, মুক্তিপণের পরিমাণ নির্ধারণ করতে তারা জিম্মিদের নিজ দেশে প্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য নিবিড়ভাবে মিডিয়া কভারেজ পর্যবেক্ষণ করছে।
পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করার পরে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে মুক্তিপণ দাবি করবে, তবে তার আগে আতঙ্ক বাড়াতে বিলম্ব করতে পারে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য প্রক্রিয়াটি দীর্ঘায়িত করছে এবং অপেক্ষার খেলা খেলছে।
এদিকে, ছিনতাই হওয়া জাহাজে থাকা একজন নাবিকের পাঠানো ভয়েস মেসেজ থেকে নতুন তথ্য জানা গেছে।
এতে জানা যায়, ১১ জন সশস্ত্র জলদস্যুর একটি নতুন দল জাহাজটি দখলকারী জলদস্যুদের পরিবর্তে জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অচলাবস্থা বিরাজ করায় এমভি আবদুল্লাহর নাবিকদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চলমান জিম্মি পরিস্থিতির অগ্রগতির বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি বজায় রেখেছে।
উল্লেখ্য, মোজাম্বিক থেকে ৫০ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাইয়ে যাওয়ার পথে গত মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে ২৩ বাংলাদেশি নাবিকসহ বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। গত রোববার মোজাম্বিক থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল জাহাজটি।
এ নিয়ে দ্বিতীয়বার কোনো বাংলাদেশি জাহাজ জলদস্যুদের হামলার শিকার হলো। এর আগে ২০১০ সালে একই কোম্পানির এমভি জাহান মনি জাহাজও সোমালি জলসদ্যুরা ছিনতাই করেছিল। ওইসময় জাহাজে ২৫ ক্রু এবং ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ মোট ২৬ ব্যক্তি ছিলেন। মুক্তিপণ দিয়ে ১০০ দিন পর তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
খুলনা গেজেট/কেডি