কোভিডে বিপর্যস্ত শরীর। একটু উন্নতিতেই শেষরাতে ঘুমটা বেশ গভীরেই ছিল। বাড়িতে কেউ ডাকেনি সঙ্গত কারণেই। ৮টা নাগাদ বাজলো মোবাইল। বন্ধু ফকির শওকতের নাম দেখেই শঙ্কিত হয়ে ধরলাম। কান্না জড়ানো কন্ঠে আমার খোঁজ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো কোনো খবর পেয়েছিস কি না। সাথে সাথে তোতা ভাইয়ের মুখটা ভেসে এলো মনের পর্দায়, বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে উঠলো অজানা ব্যথা। বললাম না, কিছু হয়েছে? এরপর সে অনেক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অনেক কষ্টে কান্না চেপে বললো ‘তোতা ভাই আর নেই’। খবরটি বিনামেঘে বজ্রপাতের মতই আছড়ে পড়লো বুকে। নির্বাক হতে পারলাম না। ওপাশে কান্নার শব্দ ভেতরের সব উগরে দিল। অবস্থা বুঝতে পেরে দ্রুত এসে ধরলো মিষ্টি। খবরটা শুনে সেও কেঁদে ফেললো। চারদশকের পারিবারিক বন্ধুর মৃত্যুর খবরে ভারী হয়ে গেল বাড়ির বাতাসটা।
মিজানুর রহমান তোতা। প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি, সম্পাদক, ইনকিলাবের বিশেষ প্রতিনিধি, কবি, লেখক- এমন অসংখ্য পরিচয়ে সমাজে পরিচিত হলেও আমার কাছে তার একটিই পরিচয় – আমার গুরু। সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিতে উদ্বুদ্ধ করা থেকে প্রতিষ্ঠিত হতে হাতেকলমে শিক্ষাটা সবচেয়ে বেশি তিনিই দিয়েছিলেন। এরপর চারদশকেরও অধিক সময় তারসাথে আমার সম্পর্ক সবার জানা। ভাবির মৃত্যুর পর প্রায় প্রতিরাতের সুখদুঃখের কথাবলার সঙ্গী ছিলাম। পরিবারের অনেক কথাই হতো, কিন্তু এভাবে চলে যাবে তা কখনই বলেননি।
হাসপাতালে যাবার আগেরদিন বিকেলে আমার করোনার খবর শুনে বলেছিলেন খুব সাবধানে থাকবেন। আমার জন্য দোয়া করবেন। কথার মাঝে হঠাৎই বলেছিলেন “কেন জানি আজ ক’দিন রেবাকে খুব মনে পড়ছে ।” আমি কোনো সান্ত্বনা না দিয়ে বলেছিলাম মনে মনে দোয়া করেন আল্লাহ তুমি রেবাকে বেহেস্ত নসীব করো। তখন সত্যিই ভাবিনি এইকথাই শেষকথা হবে। আর কোনো দিন শোনা হবে না লিডার কেমন আছেন। বলা হবে না, বস দোয়া করবেন, শরীরের দিক নজর রাখবেন, ভালো থাকবেন। এখন শুধু বলবো, আল্লা তুমি তোতা ভাইকে বেহেস্তবাসী করো। তাদের স্বামী-স্ত্রীকে একসাথে রাখো। ওরা দু’জন দু’জনকে বড্ড বেশি ভালোবসতো। শুধু কামনা করবো এমন সকাল তুমি আর দিও না, যে সকাল কেড়ে নেয় আত্মার আত্মা,ভালোবাসার মানুষটা।
আজ শেষ বিদায়ে সর্বশক্তি একত্রিত করে একটি স্যালুট দিয়ে চিৎকার করে বলছি, বস আজ আমি যা হয়েছি তার সব কৃতিত্বের অংশিদার তুমি, তুমি আমার গুরু-তুমিই আমার সাংবাদিক স্রষ্টা। তোমাকে হাজার সালাম, তুমি বেহেস্তবাসী হও। জান্নাতুল ফেরদৌস হোক তোমার ঠিকানা। সেখানেই যেন হয় আমাদের দেখা।
খুলনা গেজেট/এনএম