কুইন্সল্যান্ডের বিতর্কিত কারমাইকেল কয়লা খনির পেছনে ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানিকে বহু-বিলিয়ন ডলারের জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকান কর্তৃপক্ষ আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান, গৌতম আদানির ভাগ্নে সাগর আদানি এবং ছয় সহযোগীর বিরুদ্ধে ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ২৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ করেছে।
তাদের দাবি, এই অর্থ দেয়া হয়েছে মার্কিন বিনিয়োগকারীদের পকেট থেকে। প্রসিকিউটররা আরও বলেছেন যে আদানি এবং আদানি গ্রিন এনার্জির অন্য একজন নির্বাহী, বিনীত জৈন ঋণদাতা এবং বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে দুর্নীতি গোপন করে কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণ এবং বন্ড সংগ্রহ করেছেন।
আদালতের নথি অনুসারে, আসামিরা বিষয়টি গোপন রাখতে ব্যক্তিগতভাবে গৌতম আদানিকে “Numero uno” এবং “The big man” কোড নামে ডাকতো। সাগর আদানি ঘুষের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য ট্র্যাক করতে তার মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ, যার লক্ষ্য ছিল সৌর শক্তি সরবরাহের চুক্তিগুলি থেকে ২ বিলিয়ন ডলার লাভ করা।
আদালতের রেকর্ড অনুসারে, একজন বিচারক গৌতম আদানি এবং সাগর আদানির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন এবং প্রসিকিউটররা সেই পরোয়ানাগুলি বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তর করার পরিকল্পনা করেছেন। ফোর্বস ম্যাগাজিন অনুসারে গৌতম আদানির সম্পত্তির মূল্য ১০৭ বিলিয়ন, যা তাকে বিশ্বের ২২ তম ধনী ব্যক্তি করে তুলেছে। আদানি গ্রুপের অস্ট্রেলিয়ান সহযোগী প্রতিষ্ঠান, ব্রাভাস, সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ডের কারমাইকেল কয়লাখনির মালিক। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত খনির প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি।
এক দশক আগে এর অনুমোদনের পর থেকে, এটি গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ এবং ভূগর্ভস্থ পানির উপর প্রভাব এবং কার্বন নির্গমনের জন্য বিরোধিতার মুখে পড়েছে। ব্রাভাস নর্থ কুইন্সল্যান্ড এক্সপোর্ট টার্মিনাল এবং মোরানবাহের কাছে রাগবি রান সোলার ফার্মের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। মার্কিন কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলায় আসামিদের তালিকার মধ্যে একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি সংস্থার দুই নির্বাহী এবং কানাডিয়ান প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর তিনজন কর্মচারীর নাম উল্লেখ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ঘুষ-বিরোধী আইন ফরেন করাপ্ট প্র্যাকটিস অ্যাক্ট লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন হলেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যবসায়ী সিরিল ক্যাবানেস, যিনি ফ্রান্সের নাগরিকত্বও ধারণ করেছেন এবং আদালতের নথি অনুসারে সিঙ্গাপুরে কানাডিয়ান বিনিয়োগকারীর জন্য কাজ করছিলেন।
আদালতের নথি অনুসারে ক্যাবনেসই একমাত্র আসামী যিনি ভারতে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক নন। তার লিঙ্কডইন প্রোফাইল অনুসারে, ক্যাবনেস এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি অবকাঠামো কোম্পানিতে নেতৃত্ব এবং বোর্ডের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি সিডনির সি থ্রি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ক্যাপিটাল ফার্মের প্রিন্সিপাল এবং জিলংপোর্ট, ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন এবং বেসরকারি টিম্বার প্ল্যান্টেশন কোম্পানি এইচভিপি প্ল্যান্টেশনের একজন নন-এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান ছিলেন।
আদানি গ্রুপ তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। ওয়াশিংটনে ভারতের দূতাবাস তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি।
ডেপুটি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল লিসা মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের ২৫০ মিলিয়নের বেশি ঘুষ দেয়া, বিলিয়ন ডলার সংগ্রহের জন্য বিনিয়োগকারী এবং ব্যাংকের কাছে মিথ্যা বলার এবং ন্যায়বিচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। ইউএস সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন গৌতম আদানি, সাগর আদানি এবং ক্যাবনেসের বিরুদ্ধে সিভিল চার্জও দায়ের করেছে। সূত্র: এবিসি নিউজ।
খুলনা গেজেট/এনএম