কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান সুজনের বিরুদ্ধে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি কার্ড) জালিয়াতি করে জমি দখলসহ নানা অভিযোগ মিলেছে। আজ বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া দুইটার দিকে কুষ্টিয়া শহর থেকে আশরাফুজ্জামানকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে জমি দখলসহ নানা অভিযোগ আছে।
এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর রবিবার রাতে এনআইডি কার্ড জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকার জমি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে কুষ্টিয়া থেকে চারজনকে আটক করেন পুলিশ। এরা হলেন হরের আড়পাড়া এলাকার খন্দকার আবুল হোসেনের ছেলে ওয়াদুদ ওরফে মিন্টু খন্দকার, কুমারখালী উপজেলার শালঘর মধুয়ার আতিয়ারের ছেলে মিলন হোসেন ও তার দুই বোন ছানোয়ারা খাতুন ও জাহানারা খাতুন।
এই চক্রের সাথে কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের আহবায়ক আশরাফুজ্জামান সুজনের নাম উঠে আসায় শহর যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় যুবলীগ।
পুলিশ জানিয়েছে, একটি জালিয়াত চক্র কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর মৌজার প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের ২২ শতক জমির ভুয়া মালিক সেজে মাত্র ৭৭ লাখ টাকায় একজনের কাছে বিক্রি করে দেন। তবে ওই জমির প্রকৃত মালিক শহরের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা এমএম ওয়াদুদ ও তার শরিকরা। জালিয়াত চক্রটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে রাতারাতি অন্যের জমির মালিক বনে যান।
চক্রটি এখানেই থেমে থাকেনি, তারা শহরের এনএস রোডে আব্দুল ওয়াদুদের দোতলা বাড়িসহ কয়েকটি টাকা মূল্যের সম্পত্তিও একই কৌশলে বিক্রির চেষ্টা করছিল। চক্রটি শহরের মজমপুর, চৌড়হাস ও বাহাদুরখালী মৌজার জমি জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া দলিল তৈরি করে আত্মসাতের চেষ্টা করে। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এমন খবর প্রচারিত হলে জালিয়াত চক্রের সদস্যদের ধরতে মাঠে নামে পুলিশ। এ চক্রের অন্যতম হোতা কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের আহবায়ক আশরাফুজ্জামান সুজনসহ অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করা হয়।
জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকায় শহর যুবলীগের কমিটি কেন্দ্র থেকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে শহর যুবলীগের কমিটি বিলুপ্ত করেছেন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
দলের নেতাকর্মীরা জানান, আশরাফুজ্জামান বিএনপি আমলে ছাত্রদল করতেন। ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালের ১৫ মে ছাত্রদল নেতা সুজনকে আহবায়ক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট শহর যুবলীগের কমিটি অনুমোদন করেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ। এরপর থেকে সুজন টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। সম্প্রতি ন্যাশনাল আইডি কার্ড জালিয়াতি করে শহরের একাধিক স্থানে জমি ও বাড়ি দখলের অভিযোগ ওঠে সুজনের বিরুদ্ধে।
তবে এসব বিষয়ে পুলিশের কাছে আটকের আগে অস্বীকার করেছিলেন যুবলীগ নেতা সুজন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় আলামিন জোয়াদ্দার নামের এক ব্যবসায়ীর দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলাতেও আটক হয়েছিলেন তৎকালীন শহর যুবলীগের আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান সুজন।
খুলনা গেজেট/নাফি