খুলনা তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ বিদ্যাপীঠ সরকারি ব্রজলাল কলেজের ১১৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ। নগরীর দৌলতপুরে ভৈরব তীরে অবস্থিত এ কলেজটি ১৯০২ সালের ২৭ জুলাই শিক্ষানুরাগী ব্রজলাল চক্রবর্তী (শাস্ত্রী) কলকাতার হিন্দু কলেজেরে আদলে দুই একর জায়গায় ‘হিন্দু একাডেমী’ নামে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে মুসলিমদের ভর্তির সুযোগ ছিল না। পরবর্তীতে দানবীর হাজী মহম্মদ মহসীন ট্রাস্ট তার সৈয়দপুর এস্টেটের ৪০ একর জমি এ প্রতিষ্ঠানে দান এবং মাসিক ৫০ টাকা অনুদান বরাদ্দ করা হয়। প্রতিষ্ঠাকালের দু’টি টিনশেড ঘরে প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান শুরু হলেও আজ এর ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা চৌত্রিশ সহস্রাধিক। যা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েও নেই। আবার, এ বিদ্যাপীঠের অনেক কৃতি শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন, করছেন। এই একটি বিএল কলেজ শতাব্দীর অজস্র অযুত-নিযুত প্রাণের স্পন্দন। প্রিয় বিদ্যাপীঠের ধুলিকণায় মিশে আছে সহস্র স্মৃতি, আবেগ-অনুভূতি।
সূত্রমতে, ১৯০৭ সালে এটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। ১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠাতা ব্রজলালের মৃত্যুর পর কলেজের নামকরণ করা হয় ব্রজলাল হিন্দু একাডেমি। পরবর্তীতে একাডেমিকে কলেজে উন্নীত করা হয়। নামও সংক্ষিপ্ত করে বি এল কলেজ রাখা হয়। কলেজটি পরে পর্যায়ক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যায় অধিভুক্ত হয়েছিল। এখন পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রয়েছে। ১৯৬৭ সালের ১ জুলাই এটি সরকারি কলেজে পরিণত হয়। ১৯৯৩ সালে এটিকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে উন্নীত করা হয়।
কলেজটিতে ২১টি বিষয়ে অনার্স এবং ১৬টি বিষয়ে মাস্টার্স পর্যায়ে পাঠদান করা হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পাঠদান বন্ধ হলেও ২০১০ সালে আবার এই স্তরে পাঠদান শুরু হয়। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দু’টি মহিলা হোস্টেলসহ মোট সাতটি হোস্টেল রয়েছে। বিভাগসমূহে আলাদা আলাদা সেমিনার লাইব্রেরি ছাড়াও খুবই সমৃদ্ধ একটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার আছে। এ গ্রন্থাগারে পুস্তকের সংখা প্রায় ৫০ হাজার। বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান এবং গণিত বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স কোর্স চালু আছে। এছাড়া সমাজকর্ম, মনোবিজ্ঞান, ভূগোল, পরিসংখ্যান, মার্কেটিং, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিষয়ে অনার্স এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিষয়ে মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে।
ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ধারক এ কলেজে পড়ছেন অনেক গুণীজন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ ফায়েক উজ্জামান, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকসহ আরও অনেকে। মুনীর চৌধুরীসহ অনেক খ্যাতিমান মানুষ শিক্ষকতা করেছেন এ কলেজে।
কলেজের অধ্যক্ষ কেএম আলমগীর হোসেন জানান, কলেজটিতে একাডেমিক কার্যক্রমের বাইরেও রয়েছে বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, ডিবেটিং ক্লাব, আইসিটি ক্লাব, সাইবার সেন্টার, থিয়েটার বিদেশি ভাষা প্রশিক্ষণকেন্দ্রসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার কোন কর্মসূচি নেয়া হয়নি।
বিএল কলেজ শিক্ষার্থীদের কাছে ক্যাম্পাসটি চির অম্লান। মসজিদ, মন্দির, ভৈরব তীর, বকুলতলা চত্বর, দর্শন চত্বর, আমতলা, বটতলা, রাবারতলা চত্বর ঘিরে তাদের রয়েছে আবেগঘন সজীব স্মৃতি।
খুলনা গেজেট/এআইএন