আনন্দ র্যালী ও কেক কেটে মোংলা পোর্ট পৌরসভার ৪৬ ও বন্দরের ৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। বুধবার সকালে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মূসা ও পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আঃ রহমানের নেতৃত্বে বন্দর এলাকা ও পৌর শহরে কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে এক আনন্দ র্যালীর মাধ্যমে দিবসটির শুভ সূচনা করা হয়। পরে আলাদাভাবে কেক কেটে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন করে কর্তৃপক্ষ দুটি।
এ উপলক্ষে বুধবার দুপুরে মোংলা বন্দর ভবন চত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সচিব বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে মোংলা বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। একসময়ের মৃতপ্রায় এই বন্দর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, করোনাকালে মোংলা বন্দরে প্রায় এক হাজারটি বাণিজ্যিক জাহাজ এসেছে। এই বন্দরে জাহাজের কোন জট নেই। সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের পরে মোংলা বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বন্দরে রূপান্তর করতে অবকাঠামোসহ বিভিন্ন দিকের উন্নয়ন করেছে। এই বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বন্দরে পরিণত করতে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের আহবান জানান সচিব।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিপ ও বার্থ অপারেটর এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ জাহিদ হোসেন, সাইফ পোর্ট হোল্ডিংস এর চেয়ারম্যান মোঃ তরফদার রুহুল আমীন, ইনারবার ড্রেজিং এর কনসালটেন্ট মোঃ আইনুল কামাল, সিবিএর সাধারণ সম্পাদক কাজী খুরশিদ আলম পল্টু প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মোংলা বন্দর গত পাঁচ বছরে এক হাজার পাঁচশত ১৮ কোটি ৩৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা আয় করেছে। নভেম্বর মাসেই আয় হয়েছে তিনশত ৪৮ কোটি ২৩ লাখ ১২ হাজার টাকা। এসময় বাণিজ্যিক জাহাজ এসেছে চার হাজার একশত ৯২টি এবং পণ্যের কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে প্রায় ২৪ লাখ মেট্রিক টন। বন্দরে আটটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বন্দর ব্যবহারকারী ২৭টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের মাঝে সম্মাননা ক্রেস্ট, কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য ১২জন কর্মকর্তা-কর্মাচারীদের মাঝে সম্মাননা ক্রেস্ট এবং একশত ৪০ জন অবসারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মাচারীদের মাঝে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
১৯৭৫ সালের ১ ডিসেম্বর মোংলা পোর্ট পৌরসভা ও ১৯৫০ সালের এই দিনে পশুর নদীর জয়মনির গোলে পন্যবাহী জাহাজ ‘দি সিটি অব লিয়নস’ নোঙ্গরের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক এই সমুদ্র বন্দরটি যাত্রা শুরু করে। প্রথমে এই বন্দরটি চালনা বন্দর নামে চালু হলেও ১৯৮৭ সালে এটি মোংলা বন্দর নামে রুপান্তরিত হয়। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে ধংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছানো এই বন্দরটি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে আধুনিকায়ন শুরু করে। ওই সময়ের শুরুতে ১১ কোটি টাকা লোকসানি এই প্রতিষ্ঠানটি গত অর্থ বছরে আয় করেছে ৩৪০ কোটি টাকারও বেশী। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৯টি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মূসা, পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আব্দুর রহমানসহ বন্দরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পৌর কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/এনএম