খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  সাম্য হত্যায় তিন আসামির ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
  ডুমুরিয়ায় ট্যাংক লরি-মাহেন্দ্র মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ৪
  মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড, খালাস ৩

এনসিপির দুই উপ‌দেষ্টা পদত্যাগ না কর‌লে বিদায় করুন, ড. ইউনূসকে সালাহউ‌দ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, এই সরকারের একমাত্র ম্যান্ডেট স্বচ্ছ নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। আমরা বলেছিলাম, নির্বাচনমুখী জরুরী সংস্কার করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। তি‌নি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে, কিন্তু মনে করবেন না রোজ কিয়ামত পর্যন্ত আপনাদেরকে আমরা এই জায়গায় দেখতে চাইবো।

শনিবার (১৭ মে) খুলনার সার্কিট হাউজ ময়দা‌নে তারুণ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিপুল সংখ্যক তরুণ নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন।

ড. ইউনুসকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, ‘এখন মানুষ বলছে, আপনার সরকার এনসিপি মার্কা সরকার। আপনার সরকারে এনসিপির ২ জন প্রতিনিধি বিদ্যমান। তারা উপদেষ্টা, তারা আবার এনসিপি সংগঠন করে। যদিও অফিসিয়ালি করেন না, কিন্তু সবাই সবকিছু জানে, ওপেন সিক্রেট। যদি আপনি নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চান তাহলে এনসিপি মার্কা ২ জনকে পদত্যাগ করতে বলুন, যদি পদত্যাগ না করে আপনি বিদায় করুন।’

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, ‘আপনার সরকারে একজন বিদেশি নাগরিককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করেছেন। একজন বিদেশি নাগরিকের কাছে এই দেশের সেনাবাহিনী নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্রতিবেদন দেবে, এটা কীভাবে ভাবলেন? তিনি রোহিঙ্গা করিডরের নামে, মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে চায়। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আপনি কথা বলেননি, এ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা করেননি। অত্যন্ত ‘অ্যারোগ্যান্টলি’ আপনার সেই উপদেষ্টা বলছেন- তাতে নাকি কিছু যায় আসে না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আমরা দাবি করছি- সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে আপনি বিদায় করুন। সেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয় নিজে পদত্যাগ করবে, না হয় আপনি তাকে বিদায় করবেন। এই দেশের নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনো জাতীয় দায়িত্ব বিদেশি নাগরিকের হাতে থাকতে পারে না। এই নাগরিক ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য, আমরা তা হতে দেব না। এই দেশে বন্দর- করিডোর সবকিছু নাকি ইউনূস সরকারের অধিকারের মধ্যে পড়ে, বিদেশে আপনি কী কন্ট্রাক্ট করে এসেছেন জানি না। আপনি কি চুক্তি করে এসেছেন অবলীলাক্রমে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর, নদী বন্দর, করিডোর সব বিদেশিদের হাতে হস্তান্তর করবেন? আপনার একমাত্র ম্যান্ডেট দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন করা।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আপনি মনে করছেন আপনাকে জনগণ অসীম ক্ষমতাশীল বানিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো পরামর্শ আপনার মানার দরকার নেই। যদি তাই মনে করেন আপনার নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ হবে, ইতোমধ্যে কিছু কিছু উপদেষ্টা আপনার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করে উচ্চাভিলাষ প্রকাশ করছে। তাদের উদ্দেশ্য অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত অনির্বাচিতভাবে যেন এই সরকার থাকতে পারে। আপনার কী উদ্দেশ্য তা অবশ্য আমরা জানি না।’

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যদি কোনোদিন নির্বাচনের দাবিতে এই সরকারকে ঘেরাও করতে হয়, তা হবে আমাদের জাতির জন্য একটি দুর্ভাগ্য। আপনি কি (প্রধান উপদেষ্টা) চান এই নির্বাচনের জন্য আপনার সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হোক, এ দেশের জনগণ যমুনামুখী লংমার্চ করুক।

বিএনপির এই নেতা বলেন, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ পর্যন্ত এ রকম ৪ থেকে সাড়ে ৪ কোটি তরুণ ভোটার কেউ গণতন্ত্রের স্বাদ নিতে পারেনি।
তিনি বলেন, দেশে খুনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি একদিনে হয়নি। জাতিসংঘ স্বীকৃতি খুনী, বিশ্ব খুনী শেখ হাসিনা স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সমস্ত গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার হরণ করেছিল। ১৪০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে মারণাস্ত্রের মাধ্যমে। সামরিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। হেলিকপ্টারের গানশিপ থেকে গুলি চালানো হয়েছে। শেখ হাসিনা এই গণহত্যা চালানোর পরও তার মধ্যে এবং এই দলের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। তারা ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। উল্টো দিল্লিতে বসে এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকারীদের অপরাধী হিসেবে তকমা দিচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমরা দাবি করেছিলাম আওয়ামী লীগের বিচার করা হোক। সরকার তা করেছে, তবে অনেক পানি ঘোলা করে। আওয়ামী লীগের ১৫-১৬ বছরের ইতিহাসে তারা শুধু জুলাই গণহত্যা হত্যা করেনি, ৭ হাজার মানুষকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করেছে। অত্যাচার করে হত্যা করেছে, গুম করেছে, অপহরণ করেছে। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের জন্য সীমাহীন নির্যাতন নিপীড়ন করেছে। অত্যাচার নিপীড়নের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে ঢাকার মাটিতে, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে।

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সঞ্চলনা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।

সমাবেশস্থলে বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টুসহ বিভিন্ন জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

খুলনা গেজেট/হিমালয়/এমএনএস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!