সরকারকে বিদায় করতে নিজেদের দাবি আদায়ে আরও ইস্পাতের মত দাঁড়াতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (১২ নভেম্বর) ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফখরুল এসব কথা বলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, সংবিধানেতো কখনোও তত্ত্বাবধায়ক ছিল না, তখন সব দল মিলে আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে। তিনি বলেন, আমার ভোট দেব, যাকে খুশি তাকে দেব কিন্তু বর্তমান সরকার বলে তোমার ভোট আমি দেব। তাই এ সরকারকে আর ক্ষামতায় রাখা যাবে না। তাদের বিদায় করতে হবে।
তিনি বলেন, যারা খুন, হত্যা, গুম করে তারা কিভাবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠিক রুপ দেবেন বরং তাদের কাছে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। যারা বিরোধী দলকে সমাবেশ করতে দেয় না, বিরোধী দলেন ওপর অত্যাচার চায়, তারা কিভাবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠিক রূপ দেবে প্রশ্ন ফখরুলের।
ফখরুল বলেন, একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এ মূহুর্তে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে নির্বাচন দিতে হবে, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত এক যুগে এই সরকারের আমলে ১০ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। দেশের সম্পদ লুট করে তারা বিদেশে পাচার করছে। সরকার কোথায় চুরি করেনি? মেগা প্রজেক্ট থেকে শুরু করে বেকার ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা পর্যন্ত চুরি করেছে। এখন বলছে রিজার্ভের টাকা চিবিয়ে খায়নি। আমরা বলি আপনারা রিজার্ভের টাকা চিবিয়ে নয় গিলে খেয়েছেন। এ সময় ফখরুল শত বাধা পেরিয়ে সমাবেশে অংশ নেয়ার জন্য উপস্থিত নেতাকর্মীদের সালাম জানান।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, একনায়কতন্ত্রের যেভাবে পতন হয়, তা আপনারা সহ্য করতে পারবেন না। আমাদের দাবি, চুরির টাকা যা নিয়ে গেছেন, তা ফেরত আনেন। দেশে দুর্ভিক্ষ হবে না। ৪৭ সালে একটা হয়েছিল সেটা অন্য কারণে। রাজনৈতিক কারণে নয়। এখন যদি হয় রাজনৈতিক কারণে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ফরিদপুর জেগেছে, ফরিদপুর বার্তা দিয়েছে। এই মাঠের বাইরেও একটি বিশাল অংশ জনতা রয়েছে। আজকের মহাসমাবেশে মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে। এর আগে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশালে সমাবেশ হয়েছে। ফরিদপুর থেকে আজকে বার্তা দিয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা আগামীদিনে আন্দোলন কেমন হবে- এর বার্তা দিয়েছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ফরিদপুর থেকেই গণসমাবেশের নতুন যাত্রা শুরু। সবাই জানত এই ফরিদপুর নাকি কাদের ঘাঁটি। আপনারা প্রমাণ করে দিয়েছেন এই ফরিদপুর বিএনপি, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের ঘাঁটি। এই ফরিদপুর থেকেই গণসমাবেশের নতুন যাত্রা শুরু হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বব ঢাকায় সমাবেশের মধ্য নিয়ে এই নতুন যাত্রা শেষ হবে।
বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, যত বাধা আসুক না কেন, গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। সেদিন খালেদা জিয়া মুক্ত হবে। তারেক রহমান দেশে এসে নেতৃত্ব দিবেন।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে হত্যা, হামলা ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুরে বিভাগীয় গণসমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি।
এর আগে সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন বিএনপির নেতাকমী। এছাড়া রাতে মাঠেই কাটিয়েছেন অনেকে। তবে পথে পথে নানা প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মীদের।