জলবায়ু পরিবর্তন আজ মানবতার জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের উপকূলীয় অ লে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও লবনাক্ততা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। লবণাক্ততার কারনে কৃষি ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে আশংকাজনকভাবে। লবাণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় এলাকায় বসবাসকারীদের গর্ভবতী মায়েদের প্রি-একলেম্পশিয়া, উচ্চ রক্তচাপ ও জরায়ু সংক্রমন বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। যা মানব সভ্যতার জন্য খুবই উদ্বেগজনক।
ক্রমবর্ধমান দুর্যোগের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের মানুষের খাদ্য সংকট, স্বাস্থ্য ঝুঁকি, জীবিকার উৎস হ্রাস, অপুষ্টি, সুপেয় পানির অভাবে রোগ ব্যধি বৃদ্ধিসহ প্রতি বছর প্রচুর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সমুক্ষীন হতে হয়। উপকূলীয় অ লে গত ৩৫ বছরে লবণাক্ততা পূর্বের তুলনায় ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উপকুলের ৭৩ শতাংশ মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৫টায় সাতক্ষীরার উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পরিদর্শন শেষে শ্যামনগর উপজেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন লিডার্সের সহযোগিতায় সাতক্ষীরা জেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরাম, শ্যামনগর উপজেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরাম ও শ্যামনগর উপজেলা যুব ফোরাম যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন, জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সদস্য সচিব মাধব চন্দ্র দত্ত।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, লিডার্স এর কার্যকরী পরিষদের সভাপতি ও উপজেলা জলবায়ু অধিপরামর্শ ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাষ্টার নজরুল ইসলাম, ফোরামের সদস্য ও সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মোঃ আনিসুর রহিম, ফোরামের সদস্য ও নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, লিডার্স এর নির্বাহী পরিচালক মোহন কুমার মন্ডল, শ্যামনগর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি এস.এম মোস্তফা কামাল, ফোরামের সদস্য ও সাংবাদিক শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন, সদস্য ও সাংবাদিক আমিনা বিলকিস ময়না, সাংবাদিক আনিসুজ্জামান সুমন, সাংবাদিক এম কামরুজ্জামান প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় অ লে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও লবনাক্ততা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আইপিসিরি তথ্য অনুযায়ী পৃথিবীতে দুর্যোগ বেড়েছে ১০ গুন। ভৌগলিক অবস্থানের কারনে বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট দুর্যোগ বাংলাদেশে আঘাত করে। দেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সামুদ্রিক দুর্যোগে সমুহের ৭০ শতাংশ বয়ে যায় সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাট জেলার উপর দিয়ে। কিন্তু এ অ লের অবকাঠামো খুবই দুর্বল। এসব এলাকার প্রায় ৫৭০০ কিলোমিটার বাঁধ খুবই নাজুক। এখনও অনেক স্থান রয়েছে যা সামান্য জোয়ারেই ভেঙ্গে গিয়ে এলাকা প্লাবিত হবে। এ অঞলের মানুষের ঘর বাড়ি মাটি, কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি যা দুর্যোগ সহনশীল নয়। জনসংখ্যার অনুপাতে আশ্রয়কেন্দ্র খুবই অপ্রতুল। প্রতিটি দুর্যোগে ভেসেযায় মানুষের তিলে তিলে গড়া স য় ও সম্পদ। ফলে প্রতিনিয়ম নিঃস্ব হচ্ছে উপকূলের মানুষ।
বক্তারা আরও বলেন, গতবছর ৩টি মেগা প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হলেও তার কাজ এখনও শুরু হয়নি। উপকূলের মানুষ এখনও অরক্ষিত এবং মানবেতর জীবন যাপন করছে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা উপকূলের কিছু স্থান পরিদর্শন কওে দেখেছি সেখানে বেড়িবাঁধ খুবই নাজুক। যেকোন সময়ে ভেঙে যেতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড গত মাসে ভাঙনের বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য যে বিল তুলেছে বাস্তবে তার কোন মিল নেই। উচ্চ জোয়ারে এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থান যেকোন সময় প্লাবিত হতে পারে। এছাড়া অবৈধ নাইন্টি পাইপ বসিয়ে অসাধু মাছ চাষীরা লবণ পানি তুলছে। যাতে বেড়িবাঁধের ক্ষতি হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তাতে কোন ভ্রæক্ষেপ নেই। বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত দূর্গাবাটী এলাকার ভুক্তভোগী মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাঁধ মেরামত হয়েছে স্বেচ্ছাশ্রমে আর পানি উন্নয়ন বোর্ড সেই টাকা খরচ দেখাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই স্বেচ্চাচারিতার কারনে উপকূলের মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। অবিলম্বে পানি উন্নয়ন বোর্ডেও এই স্বেচ্চাচারিতা প্রতিরোধ করতে না পারলে বেড়িবাঁধ এর কারনে নিঃস্ব মানুষ আরও নিঃস্ব হতে থাকবে।
বক্তারা দাবি জানিয়ে বলেন, উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ দিতে হবে, সুপেয় পানির স্থায়ী সমাধান করতে হবে এবং উপকূল সুরক্ষায় দ্রুত সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
খুলনা গেজেট/এমএম