শুধু সুপেয় পানির অভাবেই সামনের দিনে উপকূল ছাড়বে কয়েক লাখ মানুষ, পরিণত হবেন জলবায়ু উদ্বাস্তুতে। লবণাক্ততার কারণে শুধু খাবার পানির সংকটই নয়; এর প্রভাবে একদিকে জীবিকা হারাচ্ছেন অনেকে, অন্যদিকে সেচযোগ্য পানির অভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে দিনকে দিন কমছে আবাদি জমির পরিমাণ।
বছরের পর বছর ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে ভাঙে বাঁধ, ভাঙে উপকূলের মানুষের স্বপ্ন। নোনা পানির স্রোত শুধু বসতভিটাই নয়, তলিয়ে দেয় সারা বছরের অবলম্বন চাষের জমিটুকুও।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি, খুলনার দাকোপ, কয়রার প্রত্যন্ত এলাকায় নোনা পানির আগ্রাসনে মানুষের জীবনটাই নোনা হয়ে গেছে।
এলাকাবাসী জানান, আশপাশের চিংড়ির ঘের থেকে নোনা পানি খালের মাধ্যমে জমিতে চলে আসে। ফলে জমি ধানসহ অন্য কোনো ফসলই উৎপাদন হয় না। বর্ষাকালে পানি তো নিষ্কাশন হয়ই না, আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি পাওয়া যায় না। উপরের পানিতে লবণ, মাটির গভীরের পানি মিঠা হলেও ডিপ টিউবওয়েল বা পাম্প বসিয়ে সেখানের পানি উত্তোলন করাও সম্ভব হয় না।
বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা আর শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততা ও স্বাদু পানির অভাবে পতিত থাকছে অনেক জমি। দুই থেকে তিন ফসলি জমিতে ফলছে এক ফসল, শাক সবজির উৎপাদনতো ঠেকেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়।
পরিসংখ্যান বলছে, খুলনা অঞ্চলের এক তৃতীয়াংশ জমিই এখন লবণাক্ততার কবলে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ফসলের যে জাতগুলো আমরা উদ্ভাবন করছি, সেগুলো যেন একটু বেশি মাত্রার লবণের ক্ষেত্রে সহিষ্ণু হয়, আবার কম মাত্রার লবণেও যেন ভালো ফসল হয়, সেদিকে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
নোনা পানির প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবন জীবিকায়। কাজের সন্ধানে অন্যত্র ছুটছেন কেউ কেউ। অনেকে এলাকা ছাড়ছেন স্থায়ীভাবেই। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও ও অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা বলছে, লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের উপকূলের প্রায় দুই লাখ কৃষক বাস্তুচ্যুত হবেন সামনের দিনে। একই চিত্র উঠে এসেছে স্থানীয় গবেষণায়ও।
শুধু জলবায়ু পরিবর্তনই নয়, খুলনা অঞ্চলে লবণাক্ততার পেছনে চিংড়ি চাষকেও দায়ী করছে পরিবেশকর্মীরা। চিংড়ি ঘেরের নামে অনেক দূরের ভূমিতে টেনে আনা হচ্ছে নোনা পানি, এতে লবণাক্ততা বাড়ছে পাশের ফসলি জমির।
অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, একবার একটা সাইক্লোনের পর নিজেকে তৈরি করার আগেই আরেকটা বিপর্যয় এসে আবার সেটি নষ্ট করে দিচ্ছে। ফলে বেঁচে থাকার তাগিদের কিন্তু তারা এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
আর চিংড়ি চাষ নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত নদী খনন করা না হলে খুলনা অঞ্চলের লবণাক্ততা ফরিদপুর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।
খুলনা গেজেট/এনএম