দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার সময় আমাদের খাওয়া, ঘুম এবং অন্যান্য অনেক কাজে পরিবর্তন আসে। আর সিয়াম সাধনার শেষে আমরা আবার আমাদের পুরানো রুটিনে ফিরে যায়। যেহেতু একমাস আমাদের কিছুটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাই ঈদের দিন অনাকাঙ্ক্ষিত অসুস্থতা বা সমস্যা এড়াতে একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
ঈদের দিন কি খাবেন বা খাবেন না বা কিভাবে কি করবেন সে ব্যাপারে পরামর্শ:
• দীর্ঘ এক মাস রোজা থাকার পর ঈদের দিন অনেক বেশী খাবার গ্রহন করলে গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপা বা বদ হজম হতে পারে। তাই,খাবার সময় অবশ্যই পরিমিতি বোধ বজায় রাখতে হবে। একবারে বেশী পরিমান খাবার না খেয়ে ছোট ছোট মিলে ভাগ করে খান।
• ঈদের দিন দাওয়াতে গেলে অনুরোধে ঢেকি গিলে উদর পূর্তি করে খাবেন না। মনে রাখবেন,দীর্ঘ এক মাস পর আবার আপনার স্বাভাবিক রুটিনে ফিরে আসার সময় একটু ধীর গতিতে আসাই ভালো। সবচেয়ে, ভালো হয় ঈদের পরের দিন গুলোতে দাওয়াত গুলো রাখা।
• অনেকের বাড়িতে,ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি থাকতে পারেন। তাই ঈদের দিন রান্নার সময় অবশ্যয় তাদের কথা বিবেচনা করে রান্না করবেন। যেন ঈদের দিনে অনিয়ন্ত্রিত খাদ্য বা তাদের জন্য যে খাবার গুলো নিষিদ্ধ সেগুলো খেয়ে তারা যেন অসুস্থ হয়ে না পড়েন। অসুস্থ মানুষ গুলোকে তাদের স্বাস্থ্যের জন্য নিষিদ্ধ খাবার খাওয়ানোর ব্যাপারে আবেগ দেখাবেন না।
• যাদের,উচ্চ রক্তচাপ বা কিডনি রোগ আছে তাদের রেড মিট এবং অর্গান মিট উভয়ই পরিহার করা উচিত।
• ঈদের দিন মাংসের নানা আইটেমের ভিড়ে শাকসবজি বা সালাদ খাবার কথা ভুলে গেলে চলবে না।মনে রাখবেন, ঈদের দিন হোক আর সাধারণ দিন হোক সুস্থ থাকতে হলে অন্তত: ২৫-৩০ গ্রাম ফাইবার বা খাদ্য আঁশ গ্রহন করতে হবে।
• ঈদের দিন কেবল গরু,মুরগী বা খাসির মাংসের আইটেমই থাকে অনেক প্রকার তবে রেড মিট বা লাল মাংসের আইটেম গুলো বাদ দিয়ে চিকেন আইটেম খেতে পারেন। এক বেলাতে, এক সাথে গরু, খাসি বা মুরগী না খেয়ে ৩ বেলায় ভাগ করে খেতে পারেন।
• ঈদের দিন, সব মাংসের আইটেম না করে মাছের আইটেম রাখতে পারেন। তিন বেলাতে মাংস না খেয়ে এক থেকে দুই বেলা মাছ খেতে পারেন। তবে প্রতি বেলাতে ৩০-৪০ গ্রামের বেশী নয়। মাংস গ্রহনের বেলাতেও একই কথা বলবো।
• ঈদের দিন রান্নার পূর্বে মাংস থেকে অতিরিক্ত চর্বি কেটে ফেলে দিন এবং হালকা গরম পানিতে ধুয়ে নিন বাকি চর্বি চলে যাবে।
• রান্নায় অতিরিক্ত তেল মসলা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এক মাস সিয়াম সাধনার পর অতিরিক্ত তেল বা মসলা যুক্ত খাবার পেটের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো না।
• মিষ্টি জাতীয় খাবার বুঝে শুনে খাবেন। যাদের ডায়াবেটিস,ইউরিক এসিড এবং ওজন বেশী তারা যথা সম্ভব সাদা চিনির তৈরি খাবার এড়িয়ে চলুন।
• খাবার গ্রহনের ৩০ মিনিট আগে ২ গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করতে পারেন এবং ১৫ মিনিট পূর্বে ১ থেকে ১.৫ কাপ মিক্স সালাদ খুব ধীরে ধীরে খাবেন এতে করে খাবার সময়, অতিরিক্ত খাবার গ্রহনের সম্ভাবনা কমে যাবে।
• যারা,আইবিএস এর সমস্যাতে ভুগছেন তারা ঈদের দিন খালি পেটে দুধের তৈরি কোন খাবার খাবেন না। ভালোভাবে,নাস্তা করার পর সেমায় বা দুধের তৈরি যেকোন আইটেম খেতে পারেন। তবে অল্প পরিমানে খাওয়া ভালো।
• যাদের ঘরে ২ বছরের কম বয়সী বাচ্চা আছে,তারা বাচ্চাকে গরুর মাংস এবং গরুর দুধের তৈরি কোন খাবার না দিলেই ভালো করবেন। কেনেনা,এই ধরণের খাবার হজম করতে স্টোমাকের যে পরিপক্কতা থাকার দরকার তা শিশুদের থাকেনা। ফলে,এই ধরণের খাবার খেলে শিশুদের পেটের সমস্যা হতে পারে।
• আর একটি কথা, সুস্থ থাকতে ঈদের দিন থেকেই শুরু করুন অন্তত ৩০-৪৫ মিনিট ব্যায়ামের অভ্যাস।
খুলনা গেজেট/ এস আই