পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর ছুটিতে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদে ভীড় জমিয়েছেন ভ্রমন পিপাসুরা। বৃষ্টি থাকায় ঈদের দিনের দর্শনার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম হলেও, বুধবার (৪ মে) দর্শনার্থীদের ভীড় ছিল অনেক বেশি। সকাল থেকেই নারী,পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষের আনাগোনা ছিল মসজিদ প্রাঙ্গনে। সন্তান-সন্ততি পরিবার পরিজন নিয়ে মুসলিম ঐতিহ্যের এই নিদর্শণ দেখছেন তারা। দুই বছর পরে বিধিনিষেধ মুক্ত ঈদ উদযাপন করতে পেরে খুশি দর্শনার্থীরা।
বিকেলে ষাটগম্বুজ মসজিদ ঘুরে দেখা যায়, মসজিদ প্রাঙ্গনে নানা বয়সী মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছেন আপনজনদের সাথে। ঘুরে ঘুরে ষাটগম্বুজের সৌর্ন্দয্য উপভোগ করছেণ তারা। মসজিদ প্রাঙ্গনে অবস্থিত বাগেরহাট যাদুঘরে থাকা খানজাহান (রহ) এর ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রত্নতাত্বিক নিদর্শণও ঘুরে দেখছেন তারা। কেউ ছবি তুলছেন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সাড়ে ৬‘শ বছরের পুরোনো স্থাপনার সাথে। শিশুরা খেলা করছে নির্মল পরিবেশে। মসজিদ প্রাঙ্গনে থাকা বিভিন্ন রাইডে চরছে শিশু-কিশোররা। সন্ধ্যা পর্যন্ত মসজিদ কমপ্লেক্সের গেটে টিকিট কাউন্টারে দর্শনার্থীদের ভীড় ছিল। বিপুল পরিমান এই দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। নিরাপদ ও নির্ভিঘ্নে ভ্রমন করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভ্রমন পীপাসুরা।
খুলনা থেকে আসা দর্শনার্থী লাবিবা মোস্তাফিজ বলেন, করোনা মহামারীর কারণে গেল দুই বছর ঈদে তেমন কোথাও যেতে পারিনি। এবারের ঈদে কোনরকম কোন বিধি নিষেধ ছিল না। গতকাল বাবা-মায়ের সাথে এলাকায় ছিলাম, আনন্দ করেছি। আজ বন্ধুদের সাথে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ দেখতে আসলাম ভাল লাগল।
মাগুরার শালিখা উপজেলা থেকে পরিবারের ১২ সদস্য নিয়ে ষাটগম্বুজে এসেছেন মধ্য বয়সী কবিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ষাটগম্বুজে আসার ইচ্ছে ছিল। এবার ঈদের ছুটিতে সবাই মিলে চলে আসলাম। এখানে এসে মুসলিমদের যে গৌরবময় ঈতিহাস ছিল সেটা স্বচোক্ষে দেখলাম। আমার পরিবারের সবাই খুব খুশি হয়েছে ষাটগম্বুজ মসজিদের এই সৌন্দর্য্য দেখে।
পাশ্ববর্তী উপজেলা ফকিরহাট থেকে আসার সাদাত আলম বলেন, এইচএসসি ২০২১ ব্যাচের সকল বন্ধুরা এসেছি এখানে। ঈদের দিনে ষাটগম্বুজের মত একটি পবিত্র ও বিখ্যাত স্থানে এক সাথে সময় কাটাতে পেরে আমরা খুব খুশি। আমাদের জেলার এই বিখ্যাত স্থাপনার সৌন্দর্য্য আমরা সারা পৃথিবীতের ছড়িয়ে দিতে চাই।
রেহেনা বেগম নামের এক দর্শনার্থী বলেন, দুই বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। ষাটগম্বুজ দেখার পরে বাচ্চারা দোলনাসহ বিভিন্ন রাইডসে উঠেছে। তারা খুবই খুশি হয়েছে এখানে এসে। সময়-সুযোগ পেলে আরাবারও আসব এখানে।
শুধু লাবিবা, রেহেনা, কবিরুল ইসলাম ও সাদাত আলম নয় ষাটগম্বুজ মসজিদে আসা হাজারও দর্শনরার্থীদের বক্তব্য একই রকম।
দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা টুরিস্ট পুলিশ, বাগেরহাট জোনের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বলেন, দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় সব সময় টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সচেষ্ট থাকে। বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদে ঈদ উপলক্ষে দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। টুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশের সদস্যরাও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় কাজ করেছে। সব মিলিয়ে ভ্রমন পীপাসুরা যাতে সুষ্ঠভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারে আমরা তার সব ব্যবস্থা করেছি।
প্রত্নত্তত্ব অধিদপ্তর, বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান মোঃ জায়েদ বলেন, ঈদ উপলক্ষে প্রতিবছর ষাটগম্বুজ মসজিদে প্রচুর পরিমাণ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের দিন নামাজের সময় অন্তত দশ হাজার দর্শনার্থী ষাটগম্বুজে প্রবেশ করেছে। বুধবারও প্রায় ৮ হাজার দর্শনার্থী বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী এই স্থাপনা ভ্রমন করেছেন। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তাসহ সার্বিক সহযোগিতার জন্য প্রত্নত্তত্ব অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্ব প্রাপ্তরা কাজ করেছেন।
খুলনা গেজেট/ টি আই