ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জরুরী সভা করেছে। সোমবার বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ মুসা’র সভাপতিত্বে বন্দর কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে নিম্মচাপটি ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে রূপান্তরিত হওয়ায় মোংলা সমুদ্রবন্দরে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে মোংলা বন্দরের অবস্থান করা দেশী-বিদেশী জাহাজে পন্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিক ভাবে চলছে বলে জানিয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার ফখর উদ্দিন।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবেলায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে, বন্দর সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সকল ব্যক্তি কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। সকল বাণিজ্যিক জাহাজসমুহকে হারবারিয়া খাল অথবা জেটির বহিনোঙ্গরে প্রেরণ করা হবে। নোঙ্গর অথবা মুরিং বয়ায় অবস্থানকৃত অভ্যন্তরিণ নৌযানসমূকে খুলনা অথবা ভৈরব নদীর উপরের দিকে নিরাপদ স্থানে প্রেরণ করা হবে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব জলযানসমূহকে ২ টায়ারে বিদ্যমান বার্থসমূহে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। বন্দরের জেটি এলাকার অভ্যন্তরে কন্টেইনার ও অন্যান্য কার্গো সমূহকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব হতে রক্ষা করতে সিঙ্গেল টায়ারে সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে বেধে রাখা হবে। কার্গো হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্টগুলোকে ইকুইপমেন্ট ইয়ার্ডে সঠিকভাবে বেধে রাখা হবে। যাতে করে ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের আবাসিক এলাকায় নিচ তলায় বসবাসরত পরিবার ও ব্যক্তিবর্গকে দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর করা হবে। মোংলা বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষের আবাসিক এলাকা ব্যতিত অন্যান্য এলাকায় বসবাসরত সকল ব্যক্তিবর্গকে এই আশ্রয় কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হবে। ঘূর্ণিঝড়ের সংকেতের পূর্বাভাসের সময়ে সকল ব্যক্তিবর্গকে মাইকিং করে সতর্ক অবস্থায় নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।
ঘূর্ণিঝড় শুরুর পূর্ব হতে শেষ অবধি এ সংক্রান্ত সকল তথ্য হালনাগাদ ও সমন্বয় সাধনের জন্য মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষে একটি কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হবে। সেখান থেকে সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কন্ট্রোল রুমের ফোনঃ ০৪৬৬২-৭৫০৪৫ ও মোবইল নম্বর-০১৪০৪৪১১৮০৩। ঘূর্ণিঝড়ে কোন জাহাজ বা জলযান বন্দর চ্যানেলে ক্ষতিগ্রস্থ অথবা ডুবে গেলে তা দ্রুত অপসারনের জন্য কয়েকটি স্যালভেজ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করা হয়েছে। প্রয়োজনে বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্ধার জলযানের সহযোগীতা গ্রহণ করা হবে। ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন সময়ে মুরিং বয়ায় থাকা জলযানগুলিকে বন্দর কর্তৃপক্ষের টাগ বোট সহযোগীতা করবে।
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে বিদ্যুৎ সরবরাহ, পানি ও সুপেয় পানিয় সরবরাহ, টেলিফোন যোগাযোগ, রাস্তাঘাট, মুরিং ও বার্থ ক্ষতিগ্রস্থ হলে তার কাজ করা হবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার ফখর উদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের মোকাবেলায় বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা একাধিক সভাও করেছি। ইয়াস মোকাবেলায় আমরা বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রয়োজন অনুযায়ী এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে। এই মুহুর্তে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিটি বিভাগ, তাদের মত করে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর কর্তৃক সতর্ক সংকেত চার জারি করা হলে আজকের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, মোংলা বন্দরে এই মুহুর্তে ১২টি দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এসব জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিক রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি