খুলনা মহানগরীর আটরা-গিলাতলা ইস্টার্ণগেটে ত্রিপল মার্ডারের মূল সন্দেহভাজন শেখ মোঃ জাকারিয়া, মিল্টন, জাফরীন হাসানের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ এলাকাবাসীর। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার এটিই প্রথম নয় বলে দাবি স্থানীয়দের। অসামাজিক কার্যকলাপ, এলাকায় প্রভাব বিস্তার করা থেকে শুরু করে জবরদখল করাই মূল কাজ ওদের।
এদের মধ্যে শেখ জাফরিন হাসানকে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দাতপুর গ্রাম থেকে আটক করেছে খুলনার গোয়েন্দা পুলিশ, জানিয়েছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির।
এদিকে, ঘাতকদের অবিলম্বে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি নিশ্চিত করতে আহ্বান জানিয়েছেন খুলনা আ’লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। মূল অভিযুক্তদের বাকি দুই জনকে এখনো গ্রেফতারে সক্ষম না হলেও শেখ জাকারিয়ার শ্বশুর কোরবান আলী, শ্যালক আরমান ও সহযোগী জাহাঙ্গীরকে আটক করেছে পুলিশ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জাকারিয়া ও তার ভাইয়েরা শুধু অবৈধ অস্ত্রধারীই ছিলেন না; অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসাও ছিল তাদের। এলাকার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অস্ত্র উচিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতেন তারা। অন্ধকার জগতের মানুষ হওয়ায় সমাজের সম্মানজনক পদ-পদবী যাতে পেতে না পারে সেজন্য এলাকার মুরব্বীরা বিরোধিতা করতেন। এতে ক্ষুব্ধ ছিল তারা। বাড়ীতে টর্চারসেল রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কথা-কাজে একমত হতে না পারলে ধরে এনে সে কক্ষে করতো নির্যাতন।
খানজাহান আলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আটক রয়েছে তিন জন। তবে এঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। প্রস্তুতি চলছে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, অভিযান চলছে।
এদিকে, এ হত্যাকান্ডে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রদানের জন্য আহবান জানিয়েছেন খুলনা আ’লীগ নেতৃবৃন্দ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, মশিয়ালি হত্যাকান্ডে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। মশিয়ালিতে সংঘটিত ঘটনা দলীয় কোন বিষয় না। ঘটনাটি শুধুমাত্র ব্যক্তি কেন্দ্রিক; যার দায়ভার শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট ওই সকল ব্যক্তির; দলের নয়। দল কোন ব্যক্তির অপকর্মের দায়ভার বহন করবে না। জাফরীনের কর্মকান্ডের কারনে আগেই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। আর সম্প্রতি মশিয়ালিতে সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় জাকারিয়াকে খানজাহান আলী থানা আ’লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আ’লীগ কোন সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে প্রশ্রয় দেয় না। সুতরাং জাকারিয়া, জাফরিন ও মিলটনের মত চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তো প্রশ্রয় দেয়ার প্রশ্নই আসে না। আ’লীগ সব সময়ই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে থাকে। সুতরাং মশিয়ালিতে সংঘটিত ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এই ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের আহবান জানান।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মুজিবর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে শেখ মোঃ জাকারিয়া, তার ভাই জাফরীন হাসান ও মিল্টন পুলিশে সোর্পদ করে। এঘটনার পর গ্রামবাসী জাকারিয়ার বাড়িতে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে যায়। এসময় জাকারিয়ার সাথে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শেখ মোঃ জাকারিয়া, জাফরীন হাসান, কবির ও মিল্টন তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ। গুলিতে ঘটনাস্থলে নজরুল ইসলাম ও গোলাম রসুল নিহত হন। পরে সাইফুল ইসলামও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শামীম, রবি, সুজন, রানা ও খলিলসহ ৮-১০জন গুলিবিদ্ধ হয়। এইদিন রাত ২টার দিকে ক্ষুব্ধ অপরপক্ষের গণপিটুনিতে জাকারিয়ার সহযোগী জাহিদ শেখ নিহত হন।
খুলনা গেজেট/এআইএন/এমএম