খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ মাঘ, ১৪৩১ | ২২ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  ইতালির রোম থেকে ছেড়ে আসা বিমানের একটি ফ্লাইটে বোমাতঙ্ক, নিরাপদে অবতরণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে
  জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের দায়িত্ব ছাড়লেন সারজিস আলম
  উত্তরা পূর্ব থানার হত্যা মামলায় সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম তিন দিনের রিমান্ডে

ইসির নিবন্ধন শর্ত শুধু কাগজে কলমেই

গেজেট ডেস্ক

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধিত দল ৪২। আইনানুযায়ী নিবন্ধিত দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় সক্রিয় অফিস থাকা বাধ্যতামূলক। সে হিসেবে অন্তত ২২ জেলায় দলীয় কার্যালয় থাকার নিয়ম।

কিন্তু একটি জাতীয় দৈনিকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু ৯টি রাজনৈতিক দলের আছে ন্যূনতম জেলা কার্যালয়। এর মধ্যে আবার আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের কার্যালয় সরব থাকলেও বাকিরা জেলায় জেলায় নিষ্ক্রিয়, নীরব। সেই পাঁচটি দলের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাকের পার্টি এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।

তবে জামায়াতের সারাদেশে ৪০টির মতো জেলা কার্যালয় থাকলেও নিবন্ধন হারানোর পর থেকে বেশির ভাগ কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। আর জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি কাছাকাছি নাম দিয়ে ইসি থেকে পাঁচটি নিবন্ধন পেলেও জেলা কার্যালয় খোঁজার সময় তাদের ভিন্ন কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। নিবন্ধিত বাকি ৩৩ দলের জেলা পর্যায়ে কার্যক্রম ও কার্যালয় কিছুই নেই। বেশ কয়েকটি দলের আবার ঢাকাতে নামকাওয়াস্তে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অস্তিত্ব মিলেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরে জাগপা, কিশোরগঞ্জ ও রংপুরে গণতন্ত্রী পার্টি, জয়পুরহাট ও চট্টগ্রামে এলডিপি, বগুড়ায় খেলাফত আন্দোলন, মাগুরায় বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাগেরহাটে খেলাফত মজলিস, বরিশালে এনপিপি ও গণফোরাম, পিরোজপুরে জাতীয় পার্টি-জেপি, কুমিল্লায় ন্যাপ, মৌলভীবাজারে ইসলামী ঐক্যজোট ও গণফ্রন্ট এবং চট্টগ্রামে ন্যাপ, গণতান্ত্রিক পার্টি ও সাম্যবাদী দলের এক বা একাধিক জেলা কার্যালয় খুঁজে পাওয়া গেছে।

২০০৮ সালে সেনাসমর্থিত সরকারের অধীনে সংশোধিত আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অনুযায়ী দলগুলোর নিবন্ধন পদ্ধতি চালু হয়। ওই সময় নবম সংসদকে সামনে রেখে শর্তসাপেক্ষে ৪০টি দলকে তড়িঘড়ি করে দেয়া হয় নিবন্ধন। পরে জামায়াতসহ পাঁচটি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নানা কারণে বাতিল এবং নতুন সাতটি দলকে নিবন্ধন দেয় ইসি। এর মধ্যে দশম সংসদের আগে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নিবন্ধন পায়। বাকি দলগুলোর মধ্যে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ কংগ্রেস, তৃণমূল বিএনপি, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদকে নিবন্ধন দেয়া হয় আদালতের নির্দেশে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসি ঘোষিত রোডম্যাপে বলা হয়েছিল নিবন্ধিত দলগুলো শর্ত মানছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হলেও হঠাৎ ওই উদ্যোগ থেকে সরে আসে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

ইসির সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান কমিশন মনে করছে– এই কাজে হাত দিলে বিতর্ক সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। সূত্র জানায়, কমিশন সদস্যদের কেউ কেউ নিবন্ধনের শর্ত পূরণের বিষয় খতিয়ে দেখার বিষয়টি সামনে আনলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এটি বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে নতুন দলের নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) নিবন্ধন দেয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিনটি শর্তের যে কোনো একটি পূরণ করলে কোনো দলকে নিবন্ধন দেয়ার সুযোগ রয়েছে আইনে। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত যে কোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসনে জয়ী হওয়ার রেকর্ড থাকতে হবে, যে কোনো একটি আসনে দলীয় প্রার্থীকে মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পেতে হবে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা কার্যালয়, অন্তত ১০০টি উপজেলায় কার্যালয় এবং প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে অন্তত ২০০ জন ভোটারের তালিকাভুক্তি থাকতে হবে।

এসব শর্তের পাশাপাশি আইনে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব পর্যায়ে কমিটি নির্বাচন, দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব অর্জন, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনকে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন হিসেবে না রাখা এবং বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থিতার জন্য তৃণমূলের ভোটে প্যানেল প্রস্তুত করার কথা বলা আছে।

ইসির সূত্র জানায়, বড় দলগুলোর কোনোটাই এখন পর্যন্ত ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি। সব কটি দল সব শর্ত পালন করছে কিনা, তা যাচাইয়ে একদিকে সময় প্রয়োজন, অন্যদিকে ভোটের আগে কারও নিবন্ধন বাতিল করতে গেলে বিতর্ক সৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে।

নিবন্ধন পাওয়া দলগুলো আইনের শর্ত না মানলেও নতুন দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ইসির কঠোরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আবেদন করেও নিবন্ধন না পাওয়া দলগুলোর পক্ষ থেকে এই কার্যক্রমে রাষ্ট্রের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও উঠেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, অভিযোগ উঠতেই পারে, অভিযোগের ভিত্তি থাকতে হবে। ইসি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশে চলে না। কমিশন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান দাবি করে তিনি বলেন, নিবন্ধনের শর্ত পরিপূর্ণ করেছে দুটি দল। তাই দল দুটিকে নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় অফিস, ২২ জেলা ও ১০০ উপজেলা অফিস রয়েছে কিনা তা তদন্ত করা হয়েছে। এই তদন্ত প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাই করতে উচ্চ পর্যায়ের আরেকটি কমিটি খতিয়ে দেখছে। এর সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থার কোনো প্রতিবেদনের সম্পর্ক নেই।

মো. আলমগীর বলেন, আইনে দলের কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সুযোগ নেই। কারও ধারণা অনুযায়ী কোনো নিবন্ধন দেয়া হয় না। তিনি বলেন, কোনো ছাত্র তিন ঘণ্টা পরীক্ষা দিয়ে ৩৩ পাননি, আরেকজন এক ঘণ্টা পরীক্ষা দিয়ে কেন ৫০ পেলেন– এই প্রশ্নের জবাব দেয়া কঠিন। কারণ খাতায় কীভাবে ছাত্র লিখছে তার ওপরে নির্ভর করে কত নম্বর পাবে।

এদিকে ইসির বিবেচনায় নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য দু’দলের একটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা শাখার একটি সাইনবোর্ড স্থানীয় এক কৃষক লীগ নেতার দোকানে গতকাল ঝুলতে দেখা গেছে। দোকানটির মালিক জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও জেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক ছাদেকুর রহমান শরীফ। কে বা কারা সাইনবোর্ডটি লাগিয়েছে কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিবন্ধন প্রথা চালুর সময় অধিকাংশ দল নিবন্ধন পেয়েছে ‘স্বাধীনতার পর যে কোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে অন্তত একটি আসনে জয়ী হওয়ার রেকর্ড থাকতে হবে’ এই শর্তে। এ ধরনের দলগুলোর জন্য কখনোই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ন্যূনতম কার্যালয় থাকার বিধান কার্যকর ছিল না। পরবর্তী সময়েও যারা নিবন্ধন পেয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এসব শর্ত মাঠ পর্যায়ে শতভাগ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে কে এম নূরুল হুদা কমিশন দলগুলো শর্ত পালন করছে কিনা, তা যাচাই করেছিল। শর্ত মেনে না চলায় গত জাতীয় নির্বাচনের আগে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, এরপর ২০২০ সালে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টি (পিডিপি) এবং ২০২১ সালে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) নিবন্ধন বাতিল হয়। আর ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত।

সূত্র: সমকাল

খুলনা গেজেট/এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!