মানসিক ভারসাম্যহীন পিতা মাতার ভরসা হয়ে পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর আশায় কুমিল্লার একটি ইটের ভাটায় কাজ করতে গিয়ে বার দিন পর লাশ হলো মাত্র দশ বছরের শিশু জাহিদুল ইসলাম। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার জয়নগর গ্রামের বাক প্রতিবন্ধী হামজার আলীর একমাত্র ছেলে জাহিদুল সোমবার সকালে কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া থানার রামনগর ইউনিয়নের এমএসডি নামের একটি ইটের ভাটায় মারা যায়।
শিশু জাহিদুলকে ইটের ভাটায় কাজ করতে নিয়ে যাওয়া শ্রমিক সর্দার রবিউল ইসলামের দাবি, মোটরের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে নিহতের পরিবারের দাবি, কষ্টের কাজ করতে না পেরে বাড়ি ফিরতে চাওয়ায় নির্যাতন করায় তার মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় আকবর আলী ও আব্দুল হকসহ কয়েকজন জানান, সোমবার বেলা ১২টার দিকে মোবাইলে জাহিদুলের পরিবারকে তার মৃত্যুর সংবাদ জানায় শ্রমিক সর্দার একই গ্রামের রবিউল ইসলাম। মাটি ভেজানোর কাজে ব্যবহৃত মোটরের তারে জড়িয়ে জাহিদুল মারা যায় বলে তাদের জানানো হয়। তবে সকালের দিকে জাহিদুল সেখানে মারামারি করে আহত হয়েছে বলেও তাদের জানানো হয়েছিল বলে তারা দাবি করেন।
স্থানীয়রা আরও জানান, জাহিদুল ইসলামের পিতা হামজার আলী বাক প্রতিবন্ধী এবং মানসিকভাবে পুরোপুরি ভারসাম্যহীন। এছাড়া তার মা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হওয়া সত্বেও ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালানোর চেষ্টা করেন।
স্থানীয়দের দাবি, পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে এ বছর স্থানীয় শ্রমিক সর্দার রবিউল ইসলাম প্রতিবেশীর ছেলে জাহিদুলকে কুমিল্লার রামনগর এলাকার একটি ইটের ভাটায় নিয়ে যায়। ভাটায় নেয়ার পূর্বে জাহিদুলের পরিবারকে শ্রমিক সর্দার অগ্রিম কিছু টাকাও দেন।
নহিতরে খালা সফুরুন্নেছা বেগম বলেন, আমার বোন ও ভগ্নিপতি প্রতিবন্ধী। ভিক্ষা করেও সংসার না চালাতে পারায় রবিউলের পরামর্শে জাহিদুলকে ইটের ভাটার কাজে পাঠানো হয়। তিনি দাবি করেন সোমবার সকালে বাড়িতে ফোন করে জাহিদুলকে ফেরানোর বিনিময়ে অগ্রিম দেয়া টাকা ফেরত চায় শ্রমিক সর্দার। তার বোনের শিশু ছেলের মৃত্যুর সঠিক কারণ খুঁজে বের করার দাবি জানান সফুরুন্নেছা।
শ্রমিক সর্দার রবিউল ইসলাম বলেন, কুমিল্লায় তার দুটি ভাটায় শ্রমিক দেয়া রয়েছে। একদিন আগে অন্য ভাটায় যাওয়ার পরদিন সকালে জাহিদুল বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মারা যায় বলে তাকে জানায় ভাটার ম্যানেজার। তার নিজের বার বছর বয়সী ছেলে রাকিবও ইটের ভাটায় কাজ করতে গেছে উল্লেখ করে রবিউল বলেন, করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকা ও পরিবারের কোন আয় রোজগার না থাকায় তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে জাহিদুল নিজের ও পরিবারের ইচ্ছাতে ইটের ভাটায় যায়।
স্থানীয় কাশিমাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, শিশুটি বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে কুমিল্লার একটি ইটের ভাটায় মারা গেছে বলে জেনেছি। তার মৃতদেহ বাড়িতে আনা হচ্ছে। মৃতদেহ দেখলে বোঝা যাবে তার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হুদা জানান, ঘটনাটি কুমিল্লা জেলার। আইনগত ব্যবস্থা সেখানেই নিতে হবে। তাছাড়া এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত থানায় কেউ কোন অভিযোগ দেননি।
খুলনা গেজেট/কেএম